Earn By Mobile Tips: আমাদের দেশে মোবাইল ফোন শুধু ক্যামেরা ও যোগাযোগের জন্য ব্যবসার হয়না নয়, এটি হতে পারে আয় করার দারুণ উপায়ও। বর্তমানে ছবি তুলতে ভালোবাসে না এমন লোকের খুবই অভাব, তাই ছবি তুলতে ভালো লাগলে, তাই একটু মন দিয়েই কাজ করেন, তাহলে শুধুমাত্র মোবাইল ক্যামেরা ও ইন্টারনেট এর মাধ্যমে ছবি আপলোড করে প্রতিদিন প্রায় ₹৫০০–₹৭০০-এর মধ্যে আয় করা সম্ভব।
আপনি যদি এমন কাজ করতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন এবং আপনি যে কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকেন না কেনো, এই কাজ করতে পারবেন এবং অতিরিক্ত পকেট মানি ঘরে আসবে, চলুন বিস্তারিত আলোচনা করা যাক
ছবির বাজার: স্টক ফটো ওয়েবসাইটগুলোর গুরুত্ব
বর্তমানে অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যেখানে ব্যবহারকারীরা ছবি আপলোড করে আয় করছেন এবং যাঁরা ছবিগুলো ব্যবহার করতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন, তাঁরা টাকা দিয়ে ছবিগুলো কিনে থাকে। এরূপ ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো Shutterstock, Adobe Stock, Getty Images, iStock ইত্যাদি। এসব সাইটে Contributors Account তৈরি করতে হবে এবং চাহিদা অনুযায়ী ছবি আপলোড করা করতে হবে। যখন কোনো ব্যক্তি আপনার ছবি ডাউনলোড করবেন, তখন আপনি রয়েলটিও পাবেন। বর্তমানে এই পদ্ধতি অনেকেই ব্যবহার করা শুরু করেছেন কারণ এজন্য বড় স্টুডিও, ব্যতিক্রমী ক্যামেরা বা বিশাল পরিমাণ ইনভেস্টমেন্টের প্রয়োজন হয় না।
কীভাবে শুরু করবেন — ধাপ ধাপে পরিকল্পনা
১) প্রথম ধাপ হবে একটি স্টক ফটো ওয়েবসাইট সিলেক্ট করা। উদাহরণস্বরূপ, Shutterstock-এর মতো একটি বিশ্বস্ত সাইট বেছে নিতে পারেন বা আপনার পছন্দ মতো।
২) Contributor বা কনট্রিবিউটর হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সাধারণত নাম, ইমেইল, ব্যাংক বা পেমেন্ট মাধ্যমের তথ্য পূরণ করতে হবে।
৩) আপনার মোবাইল দিয়েই ছবি তুলতে পারেন। প্রাথমিকভাবে এমন বিষয় নির্বাচন করতে হবে যা দৃশ্যমান, পরিচিত এবং মানুষের নজরে আসে —যেমন- প্রকৃতি, বাজারের দৃশ্যপট, রাস্তাঘাট, উৎসব, খাবার, দেশজুড়ুর গ্রাম-শহরের জীবনযাপন ইত্যাদি।
৪) ছবিগুলো সাবমিট করার আগে খেয়াল রাখবেন—ছবি যেন পরিষ্কার দেখা যায়, আলো ভালো থাকে, ফোকাস ঠিক থাকে এবং ফাইল সাইজ নির্দেশিত মাপের মধ্যে করতে হবে ।
৫) ছবির নাম, ট্যাগ বা শিরোনাম যতটা সম্ভব সঠিক ও উপযুক্ত শব্দ দিয়ে দিতে হবে। কারণ ক্রেতারা ট্যাগ বা সার্চ শব্দের ভিত্তিতে ছবি খুঁজেন; ভুল বা সাধারণ শব্দ ব্যবহার করলে ছবির দেখা যাবেনা।
৬) একবার ছবি অনুমোদিত হলে আপলোড শুরু করে দিন—প্রতি দিন বা প্রতি সপ্তাহে একটি করে ছবি আপলোড করলেই পোর্টফোলিও বড় হতে থাকবে।
কতটা আয় করা সম্ভব — বাস্তব উদাহরণ ও অভিজ্ঞতা
রয়েলটি ও চাহিদার ভিত্তিতে আয় পরিবর্তিত হয়। ধরুন, আপনি প্রতি দিন ১০টি ছবি আপলোড করলেন এবং প্রতি ছবির গড়ে একটি বা দুইটি পছন্দ বা নিচ্ছে । এখন যদি প্রতিটি ডাউনলোডের জন্য আপনার একটু সামান্য রয়েলটি থাকছে, তাহলে ১০–২৫টি ডাউনলোডের পর আয় হবে প্রায় ₹১৫০–₹৫০০ বা তার বেশি।
মাসের শেষে যদি আপনার পোর্টফোলিও শক্তিশালী হয়ে দাড়াই এবং ডাউনলোড সংখ্যা বেড়ে যায়, তাহলে প্রতিদিন ₹৫০০–₹৭০০ কমাই করা অসম্ভব কিছু নয় । এমনকি কিছু সাইট প্রতি উইকে বা মাসে পেমেন্ট মেথড অনুযায়ী অপেক্ষাকৃত বড় রাশি দিতে পারে।
ছবি বাছাই—কোন ধরনের ছবি বেচবে বেশি?
মনে রাখতে হবে ছবি যেন ইউনিক হয়—অন্যদের মতো না, একটি আলাদা দৃষ্টি থেকে থাকে। নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখুন:
- স্নিগ্ধ আলো: সকাল বা সন্ধ্যার সময় আলো ভালো হয়ে থাকে ; harsh midday আলো এড়িয়ে চলাই ভালো।
- বিষয়বস্তু: গ্রাম, শহর, খাবার, উৎসব, লোকাল ট্র্যাডিশন বা সাংস্কৃতিক দৃশ্য, প্রকৃতি ইত্যাদিতে মানুষের আগ্রহ বেশি জাগায়।
- কম্পোজিশন: ছবিতে বোঝার মতো উপাদান থাকে কি না, সিমেট্রি আছে কি না, ব্লার ব্যাকগ্রাউন্ড দিয়ে বিষয় সামনে থাকে কি না তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
- সংক্রান্তি বিষয় বেছে নেওয়া: যেমন উৎসবের দিন, ঋতু পরিবর্তন, লাল–কমলা রং বেশি দেখা যায় এমন সময়ের নানা দৃশ্য; এসব ফটোগুলো ক্রেতাদের আকর্ষণ করে থাকে।
- স্বচ্ছতা ও ফোকাস: যে ছবিগুলো ব্লারি বা খুব কম ইলুমিনেশন থাকক, সেগুলো অনুমোদিত হতে কঠিন হয়ে পড়ে; তাই ক্যামেরার ফোকাসের খেয়াল রাখতে হবে।
নিয়ম ও নীতি মানা জরুরি
যে কোনো ওয়েবসাইট ব্যবহার করলেও তাদের নীতি মানা অপরিহার্য:
- ছবিতে কারো হুবহু মুখ দেখালে model-release দরকার হতে পারে।
- যদি ছবিতে private property বা কোনো ব্র্যান্ডের লোগো স্পষ্ট দেখা যায়, তবে property release বা লোগো পারমিশন থাকা দরকার।
- ছবি আপলোড করার সময় watermark বা অনধিকারচিহ্ন ব্যবহার করবেন না, এক্ষেত্রে কপিরাইটবিহীন ছবি ব্যবহার করা উচিত।
- অবশ্যই ছবিটিকে duplicated বা অন্যের ছবি অনুলিপি করা যাবে না; ছবির মালিকানা আপনার হলে নিরাপদ।
অনুভবযোগ্য বাস্তবতা—শুরুতে ধৈর্য দরকার
তবে এক্ষেত্রে শুরুতে দেখবেন খুব বেশি ডাউনলোড আসছে না, আয় কম হতে পারে, তবে এমনটা স্বাভাবিক। তবে যদি মন দিয়ে ছবি তোলে কাজ করেন, ক্রমে ভালো ফিডব্যাক পেতে শুরু করেন, পোর্টফলিও বড় হয়—তার পর আয় দ্রুত হারে বাড়ে থাকে। এদিকে অনেক কনট্রিবিউটর জানিয়েছেন, প্রথম তিন বা চার মাসে তারা সামান্য আয় পেয়েছিল, কিন্তু একবছর পার হলে মাসে ₹২৫,০০০–₹৫০,০০০ পর্যন্ত উপার্জন সম্ভব করেছে।
শুরুতে লক্ষ্য রাখুন শিখতে; কিভাবে লোক সার্চ করে ছবি ডাউনলোড করে, কোন ধরণের ছবির চাহিদা সবচেয়ে বেশি; সেই অনুযায়ী কাজ পরিবর্তন করতে হবে।
বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের তুলনা ও বাছাই
যদিও বিভিন্ন স্টক ফটো সাইট রয়েছে, সবগুলোর নীতি, পেমেন্ট সময়, image approval সময়, royalty রেট ভিন্ন হয়ে থাকে:
- Shutterstock: সাধারণভাবে সুন্দর রুউটিন, পরিষ্কার নীতি, স্বয়ংক্রিয়ভাবে royalty পেমেন্ট করে থাকে।
- Adobe Stock: জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম, ফটো তোলা ভালো হলে ভালো অ্যাপ্রুভাল রেট পাওয়া সম্ভব।
- iStock / Getty Images: বেশি পণ্য মান ও uniqueness লাগে, তাই শুরুতে অনুমোদন একটু কঠিন হতে পারে এখানে।
- Smaller বা নতুন প্ল্যাটফর্ম: যেখানে uploader কম আছে, সেসব জায়গায় সুযোগ বেশি থেকে থাকে, তবে পেমেন্ট পারদর্শিতা যাচাই করা জরুরি এখানে।
আয় বৃদ্ধির কৌশল
- প্রতি দিন বা প্রায় প্রতিদিন ছবি আপলোড করতে থাকুন— consistency গুরুত্বপূর্ণ এই কাজে।
- গুণগত মান বজায় রাখতে হবে—আলো, রঙ, structure ইত্যাদি।
- নতুন বিষয় খুঁজতে হবে—যেমন স্থানীয় উৎসব, পথচারীর ছবি, গ্রামীণ দৃশ্য যা সবাই তেমন ফটোগ্রাফি করে থাকে না।
- সামাজিক মিডিয়াতে পোর্টফলিও শেয়ার করতে পারেন—Instagram বা Facebook পেজে আপনার কাজ প্রদর্শন করতে পারেন, যাতে ক্রেতারা বা অন্য ব্যবহারকারীরা দেখতে পারেন সহজেই।
- Keyword, Title ও Tagging গুরুত্ব দিতে হবে—searchable হবেন এমন শব্দ ব্যবহার করতে পারেন, যেমন “গ্রীষ্মের সকাল”, “গ্রামীণ বাজার”, “হস্তশিল্প”, “ঐতিহ্যবাহী” ইত্যাদি।
মাসিক আয় সম্ভাবনা একটি পূর্বাভাস
নিচে একটি সম্ভাবনামূলক হিসাব দেওয়া হলো যদি আপনি নিয়মিত কাজ করে থাকেন:
মাসের দিন | প্রতিদিন ছবি আপলোড | গড়ে ডাউনলোড | আয় (₹) |
---|---|---|---|
৩০ দিন | ১০–১২ ছবি | প্রতিদিন গড় ১–২ ডাউনলোড হচ্ছে | ₹৫০০–₹৭০০ প্রতি দিন → মাসে ₹১৫,০০০–₹২১,০০০ |
৬০ দিন | ছবি প্রায় দ্বিগুণ | ডাউনলোড কিছু বেশি হয় | মাসে ₹২৫,০০০–₹৪০,০০০ হতে পারে |
এক বছর | ভালো পোর্টফলিও গড়ে ওঠে | ডাউনলোড স্টেবল ও বেশি | ₹৫০,০০০+ সুযোগ রয়েছে ভালো কাজ করলে |
এই কাজের জন্য কি দরকার বিনিয়োগ?
বিনিয়োগ প্রায় ন্যূনতম:
- একটি ভালো স্মার্টফোন যেখানে ক্যামেরা ভালো রয়েছে
- ইন্টারনেট সংযোগ থাকা যা সকলের কমবেশি থাকে
- সময় ও ধৈর্য থাকা জরুরি
- এখানে কিছুটা ফটো এডিটিং বা ক্যামেরার বেসিক কাজ শিখতে হবে (lighting, cropping, color correction ইত্যাদি)
বড় পেমেন্ট মডেল বা স্টুডিও মানের ক্যামেরা লাগবে না শুরুতে; মান ও ইউনিকনেস বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সম্ভাব্য বাধা ও সতর্কতা
- তবে এক্ষেত্রে ছবি অনুমোদন হতে সময় লাগতে পারে
- এক্ষেত্রে কিছু ছবির ডাউনলোড নাও হতে পারে—তাহলে ছবির বিষয়বস্তু ও SEO (ট্যাগ, নাম ইত্যাদি) পরিবর্তন করা প্রয়োজন
- দালাল বা হয়রানি থেকে সতর্ক থাকা দরকার—কোনো ছবি বিক্রির নামে কেউ টাকা চায় কি না যাচাই করতে হবে
- কিছু ওয়েবসাইটের পেমেন্ট মেথড ও ন্যূনতম পেমেন্ট লিমিট থাকতে পারে—এগুলি আগে জেনে নিবেন
মোবাইলই হতে পারে আপনার ইনকামের নতুন মাধ্যম
পরিশেষে বলা যায়, নিকের মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি আপলোড করে আয় করা আজ আর এক অবাস্তব কিছু নয়; এটি সম্ভব এবং অনেকের জন্য কাজ করে থাকে। আপনি যদি একটু ধৈর্য ধরে কাজ করেন, একটু ক্রিয়েটিভ হয়ে থাকেন, ছবি তুলতে থাকুন, তা আপলোড করুন, এবং ধাপে ধাপে পোর্টফলিও গড়ে তুলুন—তাহলেই কেবল প্রতিদিন ₹৫০০–₹৭০০ বা তারও বেশি আয় সম্ভব হবে।
তবে এই কাজের শক্তি হল প্রথমে সামান্য আয় হয়, কিন্তু ফোকাস ও ধারাবাহিকতা থাকলে সময়ের সাথে মান ও আয় দুইই বাড়তে পারে। তাই আজই শুরু করুন।
ডিসক্লেমার: আজকের প্রতিবেদন শূন্য থেকে শুরু করতে উৎসাহী মানুষের জন্য তথ্যভিত্তিক হবে—আয়, royalty ও ডাউনলোড সবই নির্ভর করে আপনার কাজের ধরন, প্ল্যাটফর্মের নীতি ও সময়ের ওপর ভিত্তি করে। প্রাথমিক ভাবে অন্য কাজের পাশাপাশি এই কাজ করে ভালো আয় করতে পারেন।

NJ Team Writes content for 5 years. I have well experience in writing content in different niches. Please follow us regularly for getting genuine and authentic information.