ছোট পুঁজি বিস্তর লাভ! সরকারের বিরাট সাপোর্টে শুরু করুন এই ব্যবসা -Ayurvedic Food Business

Ayurvedic Food Business:  বর্তমানে যদি এমন কোনও ব্যবসার খুজে থাকেন যেখানে ঝুঁকি একদম কম, চাহিদা বেশি এবং সরকারি সাপোর্টও পাওয়া সম্ভব —তাহলে আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ক্ষেত্র হতে পারে আয়ুর্বেদিক খাবারের এই ব্যবসা (Ayurvedic Food Business) বাজার।

একদিকে যেখানে অনেক স্টার্টআপ লোন, ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট বা লাইসেন্স নিয়ে নানা সমস্যা হচ্ছে, সেখানে এই সেক্টরে সরকারের নিজস্ব সহায়তায় একজন সাধারণ মানুষও একটি লাভজনক ব্যবসার সহজ ইমালিক হতে পারেন। কীভাবে? আসুন ধাপে ধাপে জেনে নেওয়া যাক ধাপে ধাপে ।

সম্পর্কিত পোস্ট

Money Making Tips :মাত্র ১০০ টাকার জিনিস ৭০০ টাকায় বিক্রি, দারুণ ব্যবসার আইডিয়া

কী এই আয়ুর্বেদিক খাবারের ব্যবসা?

সাধারণত আয়ুর্বেদিক খাবার বলতে বোঝায় এমন সব খাদ্যদ্রব্য যেগুলির প্রস্তুতিতে প্রাকৃতিক উপাদান, ভেষজ উপকরণ এবং প্রাচীন আয়ুর্বেদীয় নীতির অনুসরণ করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু পণ্য হল:

  1. আমৃতম চা (তুলসি, আদা বা মধুর সংমিশ্রণ)
  2. সোনালী দুধ (হলুদ দুধ)
  3. আয়ুর্বেদিক খিচুড়ি
  4. হেলথ ড্রিঙ্কস, হরবাল জুস
  5. গুঁড়ো মশলা বা আয়ুর্বেদিক উপাদানে তৈরী স্ন্যাকস

এইসব পণ্যগুলি শুধুমাত্র ভারতে নয়, সারা বিশ্বে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে দাড়াচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষণ: ২০২৭-এর মধ্যে ১.৫ লক্ষ কোটি টাকার টার্গেট

ভারতের জাতীয় আয়ুর্বেদ গবেষণা সংস্থা ও লঘু শিল্প ভারতী (Laghu Udyog Bharati)-তরফে জানা যায়, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আয়ুর্বেদিক খাবারের বাজার প্রায় ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে চলেছে।

এই সংখ্যা কেবল অনুমান ভিত্তিক নয়—এই সেক্টরে কাজ করছে এমন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কাছে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিসংখ্যানও বটে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে শুধুমাত্র ‘আয়ুর্বেদ খিচুড়ি’ এবং ‘সোনালী দুধ’-এর বিক্রি ৪০% বেড়েছে বলে জানা যায়।

ব্যবসা শুরু করার জন্য বড় অফিস বা মেশিন লাগবে না

এদিকে যদিও অনেকেই ভাবেন, একটি ফুড প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যবসা মানেই বড় মেশিন, ফ্যাক্টরি দেওয়া, কর্মচারী আর লাইসেন্স জোগাড় করতে হাজার টাকা খরচের ব্যাপার! কিন্তু আয়ুর্বেদিক ফুড ক্যাটাগরির বিশেষত্ব হল—

  • আপনি ঘরে বসেই ছোট করে শুরু করতে পারেন এই কাজ।
  • ১০ হাজার টাকায় প্যাকেটজাত চা, গুঁড়ো, হেলথ ড্রিঙ্ক তৈরির ব্যবস্থা করে ফেলতে পারেন।
  • অর্ডার এলে স্থানীয় মার্কেট বা অনলাইন চ্যানেলে ডেলিভারি করতে পারেন।

এমনকি যাঁরা আগে থেকে হোম বেকিং বা হোম ফুডে অভ্যস্ত, তাঁদের জন্য এটি আরও সহজ এবং লাভজনক হয়ে থাকে ।

সরকারি সাপোর্ট মিলছে কোন কোন দিক থেকে?

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি দেওয়া হচ্ছে আয়ুর্বেদিক ফুড ব্যবসার জন্য:

  1. জানা যায়, একটি নির্দিষ্ট গাইডলাইন ও সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে লঘু শিল্প ভারতীর মাধ্যমে।
  2. লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি সহজীকরণ করা হয়েছে এই ক্ষেত্রে।
  3. মার্কেটিং, লেবেলিং, এক্সপোর্ট প্রসেসে হেল্প দিচ্ছে MSME বিভাগ বলে জানা যায় ।
  4. এমনকি টেস্টিং ও কোয়ালিটি কন্ট্রোল সাপোর্ট দিচ্ছে কেন্দ্রীয় আয়ুর্বেদ শিক্ষা ও গবেষণা বোর্ড ।

আন্তর্জাতিক চাহিদা: ভারতে তৈরি, বিদেশে রপ্তানি

আয়ুর্বেদিক খাবারের প্রতি আন্তর্জাতিক মার্কেটেও আগ্রহ দিনে দিনে বাড়ছে। বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকার স্বাস্থ্য সচেতন নাগরিকরা ভারতে তৈরি আয়ুর্বেদিক চা, হলুদ দুধ বা টিউনিক জাতীয় পানীয়র প্রতি আকৃষ্ট হয়েই চলেছেন।

এখন ভারতের অনেক ছোট ব্যবসায়ী Amazon, Etsy ও Shopify-এর মতো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিজস্ব ব্র্যান্ড নামেই পণ্য রপ্তানি করছেন নানা জায়গায়।

আয়ের সম্ভাবনা: কত টাকা ইনভেস্ট করলে কত রিটার্ন?

প্রাথমিক ইনভেস্টমেন্টআনুমানিক মাসিক আয়আয়তনের উপর নির্ভরশীল
₹10,000 – ₹25,000₹20,000 – ₹60,000লোকেশন, ব্র্যান্ডিং, রিভিউ
  • যদি বাড়িতে তৈরি করতে পারেন এবং প্যাকেজিং ঠিকঠাক হয়ে থাকল, তবে প্রতি ইউনিটে ৩০% পর্যন্ত লাভ সম্ভব।
  • অনলাইন প্ল্যাটফর্মে একবার রেটিং বাড়লে বিক্রি বাড়বে বহু গুণ।

প্রশিক্ষণ ও সাপোর্ট কোথা থেকে পাবেন?

সরকারিভাবে বা প্রাইভেট ইনস্টিটিউট থেকেও ট্রেনিং করানো হচ্ছে। নিচে কয়েকটি উৎস দেওয়া হল:

  1. AYUSH মন্ত্রকMSME বিভাগ যৌথভাবে ওয়েবিনার ও ট্রেনিং কোর্স চালিয়ে থাকে।
  2. Skill India MissionNSDC থেকে সাবসিডি সহ ট্রেনিং নেওয়া সম্ভব হয়ে থাকে।
  3. YouTube বা Udemy থেকেও বিনামূল্যে হোম ট্রেনিং পাওয়া সম্ভব

নারী উদ্যোগক্তাদের জন্য বাড়তি সুযোগ

নারী উদ্যোগক্তাদের জন্য এই সেক্টরে আলাদা কিছু সুবিধাও রয়েছে:

  • মহিলা উদ্যোক্তা প্রোণোদনা যোজনা: যেখানে ঋণের ওপর অতিরিক্ত ভর্তুকি পাওয়া সম্ভব হয়।
  • গ্রামীণ মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী গুলি আয়ুর্বেদিক পণ্য তৈরি করে সরকারি হাট বা মেলাতে বিক্রি করার সুযোগ পাবেন।

ব্যবসা শুরুর প্রাথমিক চেকলিস্ট

  • বাজার চাহিদা বুঝে পণ্য নির্বাচন করতে পারেন
  • সরকারি রেজিস্ট্রেশন এবং FSSAI লাইসেন্স নেওয়া
  • কাঁচামাল যোগানদাতার সঙ্গে চুক্তি করা
  • প্যাকেজিং ও ব্র্যান্ডিং পরিকল্পনা করা
  • অনলাইন ও অফলাইন মার্কেটিং প্ল্যান করা
  • প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগ বা হোম প্রোডাকশন
  • মাসিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা

 এটা শুধু ব্যবসা নয়, একটা মিশন

তাই এটা বলাই বাহুল্য যে, আয়ুর্বেদিক খাবার শুধু পেট ভরায় না, শরীর ভালো রাখার আরেক নাম—এই বিশ্বাস এখন শুধু ভারতে নয়, সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে রয়েছে। এটা এমন এক ব্যবসা যেখানে লাভের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের উপকারও হয়ে থাকে।

আর যেহেতু সরকার এই সেক্টরকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে, তাই আপনার শুরু করা ব্যবসা শুধু চলবে না, বড় হতে বাধ্য হবে। এখনই সময় পরিকল্পনা করে ঝাঁপিয়ে পড়ার।

আরও পড়ুন

আপনার এলাকায় নতুন ব্যবসা! দৈনিক আয় ₹৫,০০০ টাকা, এখনই শুরু করুন - Tiny House Business Idea

Leave a Comment

error: Content is protected !!