রাজ্য সরকার সকলের জন্য চাকরির ফ্রী প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, এখনই সুযোগ নিয়ে ফেলুন – WB Government Free Job Training

WB Government Free Job Training:  রাজ্য সরকারের “যোগ্যশ্রী” প্রকল্পে এবার বড়সড় পরিবর্তনের মাধ্যমে আরও বিস্তৃত এলাকা জুড়ে পড়ুয়াদের শিক্ষাগত উন্নয়নের পথ খুলে গেল। এতদিন পর্যন্ত এই প্রকল্পের সুবিধা শুধুমাত্র তফসিলি জাতি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের দুঃস্থ মেধাবী পড়ুয়ারাই পেতেন। তবে এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই প্রকল্পের আওতায় সাধারণ শ্রেণির পড়ুয়ারাও অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। এর ফলে রাজ্যের আরও অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রী, যাঁদের পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য সীমিত, তাঁরা বিনামূল্যে সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতির সুযোগ পাবেন। আসুন এই প্রতিবেদনে আরও বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক

পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ এবং আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই সাধারণ পড়ুয়াদের জন্য এই সুবিধা চালু করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হল, আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা অথচ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য সর্বভারতীয় স্তরের উচ্চশিক্ষার দরজা খুলে দেওয়া। এর মাধ্যমে পড়ুয়ারা জয়েন্ট এন্ট্রান্স (IIT, NIT), মেডিক্যাল (NEET) এবং অন্যান্য সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।

এদিকে গত কয়েক বছরে এই প্রকল্প যে অভূতপূর্ব সাফল্য এনেছে, তা পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। শুধুমাত্র তফসিলি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারা এই প্রকল্পের মাধ্যমে যেভাবে সর্বভারতীয় পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছে, তা প্রমাণ করে দেয় সঠিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ পেলে আর্থিক প্রতিকূলতাও বড় বাধা নয়। ২০২৪ সালেই, মোট ১,৪৪০ জন ছাত্রছাত্রী এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আইআইটি, এনআইটি ও নিটে সফলতা অর্জন করেছেন। গত তিন বছরে ৩৬ জন আইআইটি, ১৯০ জন সর্বভারতীয় জয়েন্ট, ১৪২৪ জন রাজ্য জয়েন্ট ও ৩৪৩ জন নিট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পের বিশেষত্ব হল এর কাঠামোগত পরিকল্পনা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যাতে তারা স্কুল পড়াশোনার পাশাপাশি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে পারে। সপ্তাহে একদিন স্কুল ছুটির পরে (শনিবার) এবং রবিবারে প্রতিটি জেলায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। বছরে মোট ৩৫০ ঘণ্টার মধ্যে ৩২০ ঘণ্টা ক্লাস এবং ৩০ ঘণ্টার বিভিন্ন টেস্ট ও মূল্যায়নের মাধ্যমে পড়ুয়াদের সক্ষমতা ও অগ্রগতি নিরীক্ষণ করা হয়।

প্রার্থীদের জন্য যোগ্যতা নির্ধারণের ক্ষেত্রেও কিছু শর্ত নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এই প্রশিক্ষণ পেতে হলে ছাত্রছাত্রীকে মাধ্যমিকে অন্তত ৬০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে এবং পরিবারের বার্ষিক আয় ৩ লক্ষ টাকার নিচে হতে হবে। এর মাধ্যমে প্রকৃত মেধাবী ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল পড়ুয়ারাই প্রকৃত উপকার পাবে—এই উদ্দেশ্যেই এই নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে।

শুধু প্রশিক্ষণ নয় এক্ষেত্রে এই প্রকল্পের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, প্রশিক্ষণ চলাকালীন পড়ুয়াদের মাসে ৩০০ টাকা ভাতা প্রদান করা হয়। এই ভাতা পড়ুয়ার যাতায়াত ও অন্যান্য খরচের জন্য সহায়ক হয়। শুধু তাই নয়, প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় বই ও রেফারেন্স সামগ্রী রাজ্যের নামী কোচিং সংস্থাগুলি থেকে সংগৃহীত হয় এবং পড়ুয়াদের বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। শিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখতে এবং একমুখী মানদণ্ডে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য রাজ্যের ৫০টি কেন্দ্রে একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এই প্রকল্পের প্রসার ঘটানোকে রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এতদিন যেখানে সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এই উদ্যোগ, এখন সেটি রাজ্যের সাধারণ জনগণের জন্যও উন্মুক্ত করা হয়েছে।যার ফলে বহু প্রতিভাবান ছাত্রছাত্রী, যারা পরিবারের আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে প্রাইভেট কোচিং বা প্রস্তুতি নিতে পারতেন না, এবার তাঁরা উপযুক্ত সহায়তা পাবেন।

অন্যদিকে এই সিদ্ধান্ত যে রাজ্যের শিক্ষানীতির একটি প্রগতিশীল ধারা প্রমাণ করে, তা বলাই বাহুল্য। বহু প্রতিভাবান পড়ুয়া শুধুমাত্র কোচিং-এর অভাবে সর্বভারতীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতেও সাহস পায় না। “যোগ্যশ্রী”-র সম্প্রসারিত রূপ সেই বাধা দূর করবে এবং রাজ্যের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।

এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিক্ষা সংক্রান্ত নীতি বরাবরই সামাজিক ন্যায়ের উপর জোর দেয়। তাঁর উদ্যোগে “কন্যাশ্রী”, “সবুজসাথী”, “শিক্ষাশ্রী” বা “দুয়ারে শিক্ষা”র মতো একাধিক প্রকল্প ইতিমধ্যেই রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। “যোগ্যশ্রী”-র বর্তমান সম্প্রসারণ সেই ধারাকেই এগিয়ে নিয়ে গেল আরও এক ধাপ।

সাধারণত রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চল বা গ্রামীণ এলাকাগুলিতে এমন বহু মেধাবী ছাত্রছাত্রী রয়েছেন, যারা শহরের সুযোগ-সুবিধার অভাবে পিছিয়ে পড়েন। এই প্রকল্প সেই সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। ফলে শুধুমাত্র শহর নয়, গোটা রাজ্য জুড়েই শিক্ষার সমতা ও সুযোগের বিস্তার ঘটছে।

বর্তমানে দেশে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার সংখ্যা ও গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। IIT, NIT বা AIIMS-এর মতো প্রতিষ্ঠানে পড়ার স্বপ্ন অনেকের থাকলেও প্রস্তুতির অভাব, আর্থিক সমস্যা বা গাইডেন্সের ঘাটতিতে সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ সেই সব স্বপ্নপূরণের পথকে মসৃণ করছে। সঠিক দিশা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই প্রকল্প বহু তরুণকে সাফল্যের দিশা দেখাবে।

রাজ্য সরকারের “যোগ্যশ্রী”-র ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আরও বিস্তৃত হবে বলেই আশা করা যায়। চলতি বছরে ২,০০০ ছাত্রছাত্রীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার ও দপ্তরের এই উদ্যোগ আগামী দিনে রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। ভবিষ্যতে যদি কেন্দ্রের সহযোগিতা পাওয়া যায় কিংবা প্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণ প্ল্যাটফর্ম যুক্ত হয়, তাহলে আরও বড় পরিসরে এই প্রকল্পের বিস্তার সম্ভব।

এদিকে সার্বিকভাবে বিচার করলে, “যোগ্যশ্রী” প্রকল্প এখন শুধুমাত্র তফসিলি বা আদিবাসী নয়, বরং রাজ্যের প্রতিটি প্রতিভাবান ও সৎ প্রচেষ্টা করা ছাত্রছাত্রীর জন্য এক আশার আলো। এটি কেবলমাত্র একটি সরকারি প্রকল্প নয়, বরং ভবিষ্যতের মেধাবী নাগরিক গড়ে তোলার এক সামাজিক দায়বদ্ধতা, যা রাজ্য সরকার অত্যন্ত দায়িত্বের সঙ্গে পালন করে চলেছে। এই ধরনের প্রকল্প রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি আস্থা বাড়ায় এবং দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলির কাছেও এক অনুসরণীয় মডেল হয়ে ওঠে।

Leave a Comment