Big News For Migrant Workers: পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক কাঠামোয় দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক শ্রেণির অবদান অগ্রগণ্য রয়েছে। কিন্তু কর্মসংস্থানের অভাবে রাজ্যের অনেক যুবক এবং শ্রমিককে রাজ্যের বাইরে চলে যেতে হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০২৪ সালে চালু করেছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রকল্প নাম – ‘কর্মশ্রী’। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতী এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান করে দেওয়া। ২০২৫ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্প নিয়ে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করলো, যা প্রকল্পের পরিধি ও কার্যকারিতা দুই-ই বাড়াবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
কর্মশ্রী প্রকল্প কী
‘কর্মশ্রী’ প্রকল্প হল একটি রাজ্য সরকার পরিচালিত কর্মসংস্থানমুখী প্রকল্প, যার মাধ্যমে প্রতিবছর ন্যূনতম ৫০ দিনের কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়ে থাকে। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল বেকার যুবসমাজ এবং রাজ্যের বাইরে চলে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের ফের রাজ্যে এনে কাজের সুযোগ করে দেওয়া।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা: পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ বার্তা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি বীরভূমের একটি সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে কর্মশ্রী প্রকল্প সংক্রান্ত নতুন দিকনির্দেশ করে নয়া ঘোষণা করেন। তিনি জানান, যারা বাংলার বাইরে কাজ করতে গেছেন, তারা যেন রাজ্যে ফিরে আসেন। তিনি আরও বলেন, “পরিযায়ী শ্রমিকদের বলুন বাংলায় ফিরে আসতে, এখানে কাজের সমস্যা আর নেই। এমনকি সেখান থেকে ফিরে আসার ভাড়া আমরা দেব। কর্মশ্রী প্রকল্পে তাদের কাজ দেব।পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেব।”
এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা স্পষ্ট করে দেন এবং বলেন, রাজ্য সরকারই তাদের যাত্রা ব্যয় বহন করবে।
কেন এই প্রকল্প প্রয়োজনীয়
আমরা সকলে পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। অনেক শ্রমিক বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষ কাজের সন্ধানে অন্য রাজ্যে পাড়ি জমাতে বাধ্য হন কেবল পেট চালানোর জন্য। সেখানেও তারা প্রায়শই হয়রানির শিকার হয়ে থাকল, সামাজিক নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত থাকেন অনেকেই। কর্মশ্রী প্রকল্প তাদেরকে একটি নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং সম্মানজনক জীবিকা প্রদান করতে চায় রাজ্য সরকার।
কেন্দ্রীয় প্রকল্পের তুলনায় কর্মশ্রী প্রকল্প
যেখানে কেন্দ্র সরকার ১০০ দিনের কাজের প্রতিশ্রুতি দেয় (MGNREGA) এর মাধ্যমে , সেখানে রাজ্য সরকার কর্মশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০ দিনের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু এর পরিসর কেবল কর্মদিবসেই সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে স্কিল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং, সরকারি প্রকল্পে শ্রমনির্ভর কাজ করার সুবিধা এবং কর্মতীর্থে দোকান বরাদ্দ ইত্যাদি নানা সুবিধা যুক্ত রয়েছে।
জব কার্ড আবশ্যক
কর্মশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পেতে হলে আবেদনকারীর একটি বৈধ জব কার্ড থাকতে হবে। এটি এই প্রকল্পে অংশগ্রহণের একমাত্র বাধ্যতামূলক শর্ত বলে জানা যায়। যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিক পশ্চিমবঙ্গে ফিরে এসে এই প্রকল্পে কাজ করতে চান, তাদের আগে নিজের নামে জব কার্ড তৈরি করে নিতে হবে এবং তাছাড়াও রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
আবেদনের পদ্ধতি
১. এর সংশ্লিষ্ট ব্লক অফিস বা পঞ্চায়েতে গিয়ে আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে
২. পরিচয়পত্র, ঠিকানার প্রমাণ এবং ভোটার আইডি জমা দিতে হবে
3. জব কার্ড না থাকলে তা আগে তৈরি করে ফেলুন
4. আবেদনপত্র পূরণ করে জমা দিন এবং প্রাপ্তি স্বীকারপত্র কাছে রাখুন
5. পরে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাচাই ও কাজ বরাদ্দ হবে
কাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে
কর্মশ্রী প্রকল্পে মূলত যে শ্রেণির মানুষদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, তারা হলেন:
- রাজ্যের বাইরে কাজ করতে গিয়েছিলেন এমন পরিযায়ী শ্রমিক সমূহ
- গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী বেকার যুবক-যুবতী আবেদন করতে পারবেন
- আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারের সদস্য হতে হবে
- মহিলারা এবং বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি
স্কিল ডেভেলপমেন্ট এবং প্রশিক্ষণ
এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, শুধু কাজই নয়, কর্মশ্রী প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ধরনের স্কিল বেসড প্রশিক্ষণের সুযোগও পাবেন সকল পরিযায়ী শ্রমিকগন। যুবক-যুবতীরা যাতে ভবিষ্যতে আরও ভালো ও উচ্চমানের চাকরি পেতে পারেন, তার জন্য সরকারের তরফ থেকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে:
- ইলেকট্রিশিয়ান
- প্লাম্বার
- ফিটার
- কৃষি ও পশুপালন প্রশিক্ষণ
- হ্যান্ডিক্র্যাফট বা হস্তশিল্প
কর্মতীর্থে দোকান বরাদ্দ
এই প্রকল্পের আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল, বিভিন্ন কর্মতীর্থে দোকান বরাদ্দ করা। যাদের কাজ করার জন্য দক্ষতা রয়েছে এবং নিজের উদ্যোগে কিছু শুরু করতে ইচ্ছুক, তাদের দোকান বা ব্যবসার জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হবে বিনামূল্যে।
রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্য
কর্মশ্রী প্রকল্প রাজ্য সরকারের একটি বড় পদক্ষেপ হতে চলেছে। এর মাধ্যমে সরকার নিম্নবিত্ত, বেকার এবং শ্রমজীবী শ্রেণিকে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আপামর কাজ করবে। এর পাশাপাশি সরকারি পরিষেবা এবং অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলিও দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। কাজের বিনিময়ে সম্মানজনক জীবনধারা গড়ে তোলাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
রাজ্য সরকারের বর্তমানে একটাই লক্ষ্য, পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলায় ফিরিয়ে এনে কাজের সুযোগ প্রদান, তাদের পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসন, এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা – এই তিনটি দিক থেকেই কর্মশ্রী প্রকল্প এক বিশাল সামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনা করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর নতুন ঘোষণার ফলে প্রকল্পটি এখন আরও বিস্তৃত ও কার্যকর হওয়ার পথে এগোতে পারে।
সবশেষে বলা যায়, পরবর্তী সময়ে যদি প্রকল্পের পরিধি আরও বাড়ানো হয় – যেমন: কর্মদিবস বাড়ানো, উচ্চমানের কাজ অন্তর্ভুক্ত করা, মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা সুবিধা প্রদান – তাহলে এটি বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এক নতুন দিশা হয়ে উঠতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।

NJ Team Writes content for 5 years. I have well experience in writing content in different niches. Please follow us regularly for getting genuine and authentic information.