Dairy Farming Business Idea: বর্তমান সময়ে বিজনেস করতে কে না চায়। কেননা দৈনন্দিন যেভাবে জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেতে চলেছে সেখানে সাধারণ ইনকাম দিয়ে পরিবার চালানো খুবই দুর্লভ ব্যাপার। আর বেকার হলে তো কথাই নেই। তাই আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে ভালো একটি ব্যবসার খোঁজে আছেন এবং আয় করার জন্য যেকোনো ধরনের কাজ করতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য দারুন সুযোগ হতে চলেছে এই প্রতিবেদন। আমরা এখানে এমন একটি ব্যবসা সম্পর্কে আলোচনা করতে যাচ্ছি যেখানে মাসে কমপক্ষে হলেও ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ইনকাম করা সহজ। এখন তাহলে এই প্রতিবেদনে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক
বর্তমান যুগে শুধুমাত্র শহরে নয়, গ্রামেও নতুন ব্যবসার সম্ভাবনা বহু তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে যাঁরা ঘরে বসে কিছু উপার্জন করতে চান, তাদের জন্য ডেইরি ফার্মিং বা গবাদিপশু পালন হতে পারে অন্যতম লাভজনক একটি উদ্যোগ। এই ব্যবসা শুধু পুরুষেরাই নয়, মহিলারাও সমানভাবে করতে পারেন যদি সঠিক পরিকল্পনা থাকে। এমনকি একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি থেকে শুরু করে একজন কলেজ পড়ুয়া তরুণ পর্যন্ত এই ব্যবসা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন।আসুন তাহলে এই ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক
সম্পর্কিত পোস্ট
পড়াশোনার পাশাপাশি সাইড ইনকাম মাসে 20 হাজারের বেশি! ৩ টিপস দেখুন এখনই - Income Tips for studentsডেইরি ফার্মিং ব্যবসা কেন করবেন?
গ্রামে থাকার একটা বড় সুবিধা হল, জায়গার অপ্রতুলতা এখানে নেই এবং চারণভূমি বা খাদ্যের যোগানও সহজলভ্য হয়ে থাকে। দুধ এমন একটি পণ্য, যার চাহিদা সারাবছর লেগেই থাকে। তাই, ডেইরি ফার্মিং ব্যবসা:
- দৈনিক নগদ আয়ের সুযোগ থাকে
- লোকাল মার্কেটেই বিক্রি সম্ভব হয়
- দুধ ছাড়াও গরুর গোবর, ঘি, পনির, দই ইত্যাদির মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি সম্ভব
- এতে সরকারি সাহায্য ও লোন পাওয়া যায় সহজেই
- বড় কথা হল, সহজে শুরু করা যায়, অভিজ্ঞতা কম থাকলেও
কতগুলো পশু নিয়ে ব্যবসা শুরু করবেন?
আপনি যদি একেবারে ছোট আকারে শুরু করতে চান, তাহলে ২-৪টি গরু বা মহিষ নিয়েই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তবে একটু বড়ভাবে শুরু করতে চাইলে আরও বেশি পর্যন্ত গবাদিপশু রাখাই উত্তম। একজন ব্যক্তি একা ৪-৬টি পশুর দেখভাল সহজেই করতে পারেন।
একটি ভাল গাভী বা মহিষ কিনতে কত খরচ পড়ে?
বর্তমানে একটি ভাল জাতের গাভী বা মহিষের দাম পড়ে প্রায় ₹৭০,০০০ থেকে ₹৯০,০০০ টাকা পর্যন্ত। তবে দামের সঙ্গে সঙ্গে তাদের দুধ দেওয়ার ক্ষমতা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশী ও বিদেশি মিলিত জাত (Cross Breed) গাভী বেশ ভালো দুধ দিয়ে থাকে।
শুরুতে কী কী খরচ হবে?
ডেইরি ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে কিছু খরচ করতে হবে, যেমন:
- পশু কিনতে খরচ
- শেড বা গোয়ালঘর তৈরি করা
- চারা/খাদ্যের যোগান খরচ
- পানি ও চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ বহন করা
- গোবর পরিষ্কার ও ব্যবস্থাপনা
- ছোট খরচ যেমন বালতি, দুধ রাখার পাত্র, ওজন যন্ত্র ইত্যাদি
এক্ষেত্রে সাধারণভাবে শুরুতে প্রায় ₹৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। তবে যদি আপনার নিজস্ব জমি বা পুরনো গোয়ালঘর থেকে থাকে, তবে খরচ অনেকটাই কমে যাবে।
সরকারি সাহায্য ও লোন কীভাবে পাবেন?
এই ব্যবসায় আগ্রহী ব্যক্তি NABARD (ন্যাবার্ড), পশুপালন দফতর, এবং কৃষি ও সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে সহজে লোন নিতে পারেন এবং এতে ২৫% পর্যন্ত সাবসিডি পেতে পারেন। প্রাথমিকভাবে আপনাকে একটি প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করে জমা করতে হবে এবং স্থানীয় পশুপালন দফতরে যোগাযোগ করতে হবে।
দুধ বিক্রির মাধ্যম কী কী হতে পারে?
গ্রামের আশপাশে বেশিরভাগ মানুষ সরাসরি খাঁটি দুধ পছন্দ করে থাকেন, এর ফলে আপনার কাছ থেকেই তারা কিনবেন, এতে করে ট্রান্সপোর্ট খরচ কমবে।
- স্থানীয় বাজার বা মুদি দোকানে সরবরাহ করতে পারেন
- হোটেল ও চায়ের দোকানে দুধ বিক্রি করা যায়
- বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করা
- শহরে ছোট দুধের দোকানে হোলসেল সরবরাহ করা
- ডেইরি কো-অপারেটিভ সোসাইটির সদস্য হয়ে বিক্রি করা
মাসিক ইনকাম ও খরচের হিসাব
একটি সাধারণ লাভের পরিমাণ হিসাব নিচে দেওয়া হলো, যা আপনাকে ব্যবসার লাভ বুঝতে সাহায্য করবে।
৪টি মহিষের ব্যবসা:
- প্রতিদিন দুধের পরিমাণ: ৩২ লিটার (প্রায় ৮ লিটার × ৪)
- প্রতি লিটারে দুধ বিক্রি: ₹৫০ বা তার কম
- প্রতিদিন আয়: ₹১৬০০ বা কিছুটা কম
- মাসিক আয়: প্রায় ₹৪৮,০০০
- মাসিক খরচ: প্রায় ₹১৫,০০০
- নিট লাভ: প্রায় ₹৩৩,০০০
একই ভাবে ৬টি মহিষের ব্যবসা:
- প্রতিদিন দুধ উৎপাদন: ৪৮ লিটার
- আয়: ₹৭২,০০০
- খরচ: ₹২০,০০০
- নিট লাভ: ₹৫২,০০০ ( দুধের পরিমাণ বেশি হলে ইনকাম বেশি হবে)
এই হিসাবগুলো আনুমানিক, প্রকৃত আয়-ব্যয়ের পরিমাণ অঞ্চল ও পশুর জাত ও দুধের পরিমাণ অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।
অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ কোথায়?
এর আয় শুধু দুধ বিক্রির মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ থাকে না, আপনি চাইলে দুধ থেকে ঘি, দই, পনির ইত্যাদি তৈরি করে স্থানীয় দোকান বা বাজারে বিক্রি করে আয় করতে পারেন। এতে আপনার প্রতি লিটারে লাভ অনেক বেশি হবে।
এছাড়াও গোবর থেকেও জৈব সার তৈরি করে বিক্রি করা যায়, যা বর্তমানে অর্গানিক কৃষিতে বেশ চাহিদাসম্পন্ন হয়ে থাকে।
ব্যবসায় সফল হতে হলে কী কী করতে হবে?
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে দুধ সংগ্রহ করতে হবে
- পশুর স্বাস্থ্য রেকর্ড রাখা
- নিয়মিত ওষুধ ও টিকাকরণ করা
- চারা ও খাবারের গুণমান নিশ্চিত করতে হবে
- ব্যয় ও আয়ের হিসাব খাতা রাখা
- পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে
এই ব্যবসার জন্য যদি আপনি এসব বিষয় মেনে চলেন, তাহলে ব্যবসাটি শুধুমাত্র আর্থিকভাবে নয়, মানসিক তৃপ্তির ক্ষেত্রেও অনেক কিছু সাফল্য দেবে।
পরিশেষে এটাই বলাই যায় যে, আপনি যদি ডেইরি ফার্মিং সম্পর্কে ব্যবসা শুরু করেন তাহলে অনায়াসে আপনার পকেটে ভালো ইনকাম ঢুকতে পারে। সব থেকে বড় কথা হল এর চাহিদা ব্যাপক রয়েছে এবং আজীবন এর চাহিদা থেকেই যাবে। সে দিক থেকে যাচাই করলে দেখা যায় এই ব্যবসা আপনার ভবিষ্য উজ্জ্বল করবে।
পাশাপাশি এই ব্যবসায়ী আপনি ভালো ইনকামের সুবিধাও পাচ্ছেন। আরেকটি বড় কথা হল অনেকের ঘরের বাইরে কাজ করতে চাই না তাদের জন্য এই ব্যবসা হতে চলেছে দারুন সুযোগ।

NJ Team Writes content for 5 years. I have well experience in writing content in different niches. Please follow us regularly for getting genuine and authentic information.