জন্ম সার্টিফিকেট নিয়ে নয়া জাড়ি, আর সহজেই হবে না এই কাজ – Birth Certificate Correction Rule

Birth Certificate Correction Rule : বর্তমানে রাজ্য জুড়ে তোলপাড় হচ্ছে বার্থ সার্টিফিকেট পরিবর্তন বা ডিজিটালাইজেশন আপডেট। বিশেষ করে রাজ্য জুড়ে শুরু হতে চলেছে SIR কর্মসূচি যার জন্য নিচের ভোটাধিকার বজায় রাখতে অনেকেই বার্থ সার্টিফিকেট এর উপর জোর দিচ্ছে। তবে বর্তমানে বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে কি আপডেট এসেছে এবং কি নতুন নিয়ম জারি করা হয়েছে তার জন্য এই প্রতিবেদন রচনা করা হল। আপনি যদি এই সম্পর্কে আর বিস্তারিত জানতে চান তাহলে শেষ পর্যন্ত পড়ুন

নতুন নিয়ম কেন জারি করা হল?

পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দপ্তরের সাম্প্রতিক এক নির্দেশিকায় জন্ম সার্টিফিকেট সংশোধনের ক্ষেত্রে কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে জন্ম সার্টিফিকেটের নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসছিল বেশ কিছুদিন ধরে। অনেকেই অপ্রয়োজনীয় কারণে, কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বারবার নাম পরিবর্তনও করছিলেন বলে জানা যায়। এমনকি জন্মের অনেক বছর পরও নাম বদলের চেষ্টা করা হচ্ছিল এমনটাও রিপোর্ট আছে। এই অনিয়ম রুখতেই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

২ কিংবা ৪ চাকা গাড়ি নিয়ে পরিবহন মন্ত্রকের নয়া নিয়ম জারি, না মানে ৫ গুণ বেশি জরিমানা - New Traffic Rule 2025

নতুন নিয়মের ফলে নাম সংশোধনের পুরো প্রক্রিয়া আরও নিয়ন্ত্রিত ও স্বচ্ছ করতে চলেছে স্বাস্থ্য দপ্তর, এবং যাঁরা প্রকৃতভাবে সংশোধনের প্রয়োজন বোধ করেন, তাঁরা নির্ধারিত বিধি অনুসরণ করলেই তা করতে পারবেন।

কোন কোন ক্ষেত্রে নাম সংশোধনের সুযোগ থাকবে?

সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে বর্তমানে নাম সংশোধনের প্রক্রিয়াটি হয়েছে সীমিত, শুধু নির্দিষ্ট কয়েকটি পরিস্থিতিতে। এর বাইরে আর কোনও ইচ্ছেমতো সংশোধন করা যাবে না তা স্পষ্ট বলা আছে। চলুন, দেখে নেওয়া যাক কোন কোন পরিস্থিতিতে সংশোধন অনুমোদিত হতে পারে:

১. জন্মের সময় নাম উল্লেখ না থাকলে:

যদি শিশুর জন্ম সার্টিফিকেটে নাম প্রাথমিকভাবে উল্লেখ করা না হয়ে থাকে, এবং পরে নাম যুক্ত করার প্রয়োজন হয়ে থাকে যা সবমসময় লাগে, তাহলে নির্দিষ্ট নিয়ম ও প্রক্রিয়া মেনেই তা করা যাবে। এক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে স্কুল সার্টিফিকেট, বার্থ রেজিস্ট্রেশন রেকর্ড, হাসপাতালের জন্ম সংক্রান্ত ডকুমেন্ট ইত্যাদি থাকতে হবে।

২. টাইপোগ্রাফিক্যাল ভুলের ক্ষেত্রে:

যদি কারো নাম লেখার সময় বানান ভুল হয়ে যায় (যেমন – “Rahul” এর পরিবর্তে “Rahol”), এবং তা যদি সুস্পষ্টভাবে টাইপ মিসটেক হিসেবে ধরা হয়, তাহলে সংশোধনের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে এক্ষেত্রেও যথাযথ কাগজপত্র জমা দিতে হবে যেমন স্কুল সার্টিফিকেট, আধার কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদি ডকুমেন্টস।

৩. বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে:

এই ক্ষেত্রে সন্তানের নাম পরিবর্তন বা সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই। আগে কিছু ক্ষেত্রে ডিভোর্সের পরে সন্তানের নাম বা পদবি পরিবর্তন করে ফেলতেন একতরফাভাবে—এখন সেই পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

নতুন নিয়মে কী কী ডকুমেন্ট লাগবে সংশোধনের জন্য?

তবে নাম সংশোধনের জন্য নির্ভরযোগ্য প্রমাণপত্র প্রয়োজন হবে। কিছু আবশ্যিক ডকুমেন্ট নিচে উল্লেখ করা হল:

  1. হাসপাতালের জন্ম প্রমাণ ডকুমেন্টস
  2. মাতৃ ও শিশুর স্বাস্থ্য কার্ড (MCH Card) বা পোলিং কার্ড
  3. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ভর্তি সংক্রান্ত ডকুমেন্ট
  4. তার আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড (যদি প্রযোজ্য হয়)
  5. আদালতের ডিক্লারেশন (প্রয়োজনে)
  6. বাবা-মায়ের নামের পরিচয়পত্র

উপরোক্ত যে কোনো একটি নথি ছাড়া নাম সংশোধনের আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।

নাম সংশোধনের প্রক্রিয়া কীভাবে করবেন?

নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি নতুন নিয়ম অনুযায়ী নিজের বা পরিবারের সদস্যের নাম সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারেন:

১. স্থানীয় স্বাস্থ্য দপ্তরে যোগাযোগ করুন:

এর জন্য সরাসরি সংশ্লিষ্ট পৌরসভা বা পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে আবেদন করতে হবে। অনেক স্থানে অনলাইন ফর্মও পূরণ করা যায় ।

২. নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করুন:

নিকটবর্তী CMOH অফিস থেকে নির্ধারিত ফর্ম নিতে হবে অথবা অনলাইনে ডাউনলোড করে নিতে হবে।

৩. সমস্ত প্রমাণপত্র জোগাড় করুন:

আপনার অবস্থা অনুযায়ী (টাইপো, নাম না থাকা ইত্যাদি), প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করে রাখতে হবে।

৪. ফর্ম ও ডকুমেন্ট সাবমিট করুন:

এরপর ওই ফর্ম ও ডকুমেন্ট জমা দিলে স্বাস্থ্য দপ্তর তদন্ত করে সিদ্ধান্ত  নেবে।

৫. এরপর সংশোধনের অনুমতি পেলে নতুন সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে।

কাদের উপর প্রভাব ফেলবে এই নতুন নিয়ম?

এই নতুন নিয়ম প্রভাব ফেলবে সেই সমস্ত নাগরিকের ওপর, যারা ইতিমধ্যেই নাম সংশোধনের জন্য ভাবছেন বা ভবিষ্যতে তা করতে চলেছেন। এর পাশাপাশি, সরকারি স্কুল, কলেজ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এই রুল অনুসারে নথিপত্র গ্রহণ করতে চলেছে।

  1. ছাত্রছাত্রী: যারা স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় জন্ম সার্টিফিকেট দেখাতে হয়।
  2. বিবাহের সময়: যখন নাম এবং জন্মস্থান যাচাই করা হয়ে থাকে।
  3. পাসপোর্ট বা আধার কার্ড আপডেটের সময়।
  4. প্রবাসীদের জন্য: যাঁরা বিদেশে পড়াশোনা বা চাকরি করতে চান, তাঁদের জন্ম সনদে ভুল থাকলে সমস্যা হতে পারে।

সাধারণ নাগরিকদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

১. জন্মের সময় সঠিক নাম রেজিস্টার করুন:
নবজাত সন্তানের নাম রেজিস্ট্রেশনের সময় নিশ্চিত হন যে বানান একদম সঠিক, কারণ পরে সংশোধন করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

২. সব গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট গুছিয়ে রাখুন:
আপনার সন্তানের স্কুল সার্টিফিকেট, জন্মের সময় হাসপাতালের রিপোর্ট ডকুমেন্ট ইত্যাদি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।

৩. নতুন নির্দেশিকা ভালোভাবে পড়ুন:
আবেদন করার আগে সরকারি ওয়েবসাইট বা স্থানীয় স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে নির্দেশিকা দেখে নেওয়া দরকার।

৪. কোন এজেন্ট বা দালালের উপর নির্ভর করবেন না:
অনেক সময় দালালরা ভুল পথে নাম সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়া এখন কঠোর হওয়ায় সেই পথে হঠাৎ কোনো সমস্যাও হতে পারে।

এই সিদ্ধান্তের ভবিষ্যৎ প্রভাব কী হতে পারে?

এই নতুন নিয়মে কিছু অসুবিধা যেমন বাড়বে, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে এটি একটি ভালো পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ:

  • এর ফলে নথি সংশোধনের স্বচ্ছতা আসবে।
  • সামাজিক নিরাপত্তা এবং পরিচয় নিয়ে প্রতারণা অনেকটা কমবে।
  • আইনি জটিলতা অনেকটা কমবে।
  • আধার, প্যান ও পাসপোর্ট ইস্যুতে তথ্যভ্রান্তি কমবে।

জন্ম সার্টিফিকেট একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি, যা নাগরিক জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে দরকার হয়ে থাকে। তাই এর তথ্য যতটা সম্ভব নির্ভুল ও সঠিক রাখা দরকার। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই নতুন নির্দেশিকা সেই নির্ভুলতা নিশ্চিত করার একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে। ইচ্ছেমতো নাম সংশোধন করার দিন এখন শেষ। তাই নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব, তথ্যের সত্যতা বজায় রাখা এবং নিয়ম মেনে চলা।

আরও পড়ুন

লাভ দ্বিগুণ, এই ব্যবসার চাহিদা সারাজীবন, ৩০ হাজার আয় করুন কাল থেকেই - Evergreen Business Idea

Leave a Comment