OBC নিয়ে ফের খারাপ সংবাদ! রাজ্যের কথা পাত্তায় দিল না আদালত – WB OBC Case Latest Update

WB OBC Case Latest Update: রাজ্য ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি) শংসাপত্রের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে আইনি জট ক্রমশই গভীরে দিকে ঝুঁকছে। এই নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল এবং এমনকি দ্রুত শুনানির আবেদন করেছিল। তবে, আদালতে প্রধান বিচারপতি সেই আবেদন মঞ্জুর করেননি। এরফলে, নির্ধারিত সময়ের আগেই শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই।

রাজ্যের আবেদন মানল না আদালত

এদিন রাজ্যের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে জানানো হয়েছিল যে, হাই কোর্টের একাধিক নির্দেশের ফলে প্রশাসনিক জটিলতা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে, ওবিসি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তির কারণে শিক্ষা ও ভর্তি প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তায় রয়েছে। রাজ্যের আইনজীবীরা চেয়েছিলেন যে আগামী বৃহস্পতিবার অথবা সোমবারের মধ্যে মামলাটি শোনা হোক। কিন্তু প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, মামলাটি নির্দিষ্ট তারিখেই তালিকাভুক্ত থাকবে এবং নতুন করে কোনো বিশেষ শুনানির সময় নির্ধারণ করা হবে না।

সম্পর্কিত পোস্ট

নাগরিকত্বের জন্য স্মার্ট কার্ড, একটাই যথেষ্ট! জল্পনা, সম্ভাবনা ও বাস্তবতা - Indian Smart Citizenship Card

এর পরবর্তী শুনানির সম্ভাব্য তারিখ

সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর এই মামলার শুনানি হতে পারে। অর্থাৎ, এর আগে কোনো শুনানি হবে না। এর ফলে, হাই কোর্টের বর্তমান নির্দেশ কার্যকর থাকবে এবং রাজ্যের প্রশাসনিক কাজকর্মও সেই নির্দেশ অনুযায়ী চালাতে হবে।

মামলার পটভূমি: ২৮ জুলাইয়ের সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ

গত ২৮ জুলাই ২০২৫ সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাই কোর্টের একটি নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছিল। হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ওবিসি শংসাপত্রের বিজ্ঞপ্তি বাতিল হওয়ার কথা ছিল। রাজ্য সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে আপিল করে। প্রথমে আশা করা হয়েছিল যে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হবে, কিন্তু এখন শুনানি এক মাস পিছিয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে এর প্রভাব: জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফল প্রকাশে ফের বাধা

ওবিসি মামলার জেরে পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের ফল প্রকাশ দীর্ঘদিন ধরে আটকে রয়েছে। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। সম্প্রতি হাই কোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দ নির্দেশ দেন যে নতুন ওবিসি তালিকা মেনে মেধাতালিকা প্রকাশ করা যাবে না। তার বদলে ২০১০ সালের আগে প্রস্তুত করা ৬৬টি ওবিসি সম্প্রদায়ের পুরনো তালিকার ভিত্তিতে নতুন মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে। সেই তালিকায় ওবিসি ছাত্রছাত্রীদের জন্য ৭ শতাংশ সংরক্ষণ বজায় থাকবে।

হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী নতুন মেধাতালিকা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু

হাই কোর্টের নির্দেশে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে পুরনো বিধি মেনে নতুন মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে। অর্থাৎ, রাজ্য সরকার ও জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডকে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এই কাজ শেষ করতে হবে। এতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় দ্রুত সমাধান আসতে পারে, তবে নতুন তালিকায় অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আবারো বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজ্যের আপত্তি ও আইনি যুক্তি

রাজ্য সরকারের দাবি, হাই কোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়ন করা এখন প্রায় অসম্ভব, কারণ নতুন করে মেধাতালিকা তৈরিতে সময় এবং প্রযুক্তিগত জটিলতা রয়েছে। এছাড়া, বর্তমানে কার্যকর ওবিসি তালিকা হঠাৎ পরিবর্তন করলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। এই কারণেই রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে দ্রুত শুনানির আবেদন করেছিল।

আদালতের অবস্থান: নির্ধারিত প্রক্রিয়ার বাইরে নয়

প্রধান বিচারপতি বিআর গবই স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে আদালতের নির্ধারিত প্রক্রিয়া ভেঙে কোনো মামলার শুনানি এগিয়ে আনা হবে না। তিনি জানান, মামলাটি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে না, কিন্তু নতুন তারিখও নির্ধারণ করা হবে না। অর্থাৎ, সকল পক্ষকে নির্দিষ্ট তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া

এই মামলার কারণে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা। জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফলপ্রকাশ বিলম্বিত হওয়ায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী ইতিমধ্যেই অন্য রাজ্যের কলেজে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন যাতে তাদের শিক্ষাবর্ষ নষ্ট না হয়। অভিভাবকরাও এই পরিস্থিতিতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

রাজ্যের বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করছে যে সরকার ওবিসি নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে এই জটিলতা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, রাজ্য সরকার বলছে, তারা কেবল সংরক্ষণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার বজায় রাখতে চেয়েছে। তবে, আদালতের রায়ের পর প্রশাসনিক পদক্ষেপগুলো প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর মামলার শুনানি হলে আদালত কী সিদ্ধান্ত নেবে, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। যদি সুপ্রিম কোর্ট হাই কোর্টের নির্দেশ বহাল রাখে, তবে রাজ্যকে পুরনো তালিকা মেনে মেধাতালিকা প্রকাশ করতেই হবে। অন্যদিকে, যদি শীর্ষ আদালত রাজ্যের পক্ষে রায় দেয়, তবে নতুন তালিকা কার্যকর হতে পারে।

রাজ্যে ওবিসি শংসাপত্র সংক্রান্ত মামলাটি এখন রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলছে। শুনানি পিছিয়ে যাওয়ার পর ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহল—সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের রায়ই নির্ধারণ করবে এই জট কতদিনে মিটবে কি না।

আরও পড়ুন

৩০ টাকায় পণ্য তৈরি, বিক্রি হবে ১০০ টাকায়, ১-১.৫ লক্ষ — সম্পূর্ণ গাইড -Slipper Making Business Idea

Leave a Comment

error: Content is protected !!