নিজের ঘরেই ব্যবসা, ₹৪০,০০০ টাকা মাসিক আয়, নিজের কোম্পানি তৈরি করুন – Agarbati Business Idea

Agarbati Business Idea:  আপনি কি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান, আপনি কি স্বপ্ন দেখছেন যে আপনারা একটি নিজের ব্যবসা হবে এবং সেখান থেকে আপনি আপনার পরিবারকে চালাতে পারবেন। তাহলে এই প্রতিবেদন আপনার জন্য কেননা এখানে এমন একটি ব্যবসা সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে যার সারা বছর চাহিদা রয়েছে। এই ব্যবসায় একবার শুরু করতে পারলে সারা বছর কম বেশি আই আসতেই থাকবে। এমনকি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে এই ব্যবসার উৎপাদিত পণ্য কিনে থাকবেন। বলতে গেলে দিনের শুরুতেই এই যিনি সকলের এ প্রয়োজন হয়ে থাকে। 

আজকে যে ব্যবসার সম্পর্কে বলতে যাচ্ছি তা হল আগরবাতি। আগরবাতি এখন কেবল পূজার সামগ্রী নয়, বরং এটি প্রতিদিনের জীবনের একটি অংশ হিসেবে চিহ্নিত। হিন্দু, বৌদ্ধ কিংবা অন্য যে কোনও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে আগরবাতি ববহার অপরিহার্য। শুধু তাই নয়, এর ঘ্রাণজনিত গুণাগুণের কারণে অনেকে এটিকে রিল্যাক্সেশন বা ধ্যানের জন্যও ব্যবহার করে থাকে। ঘর, অফিস, দোকান, যোগ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা স্পা — সর্বত্র এর চাহিদা অপরিসীম। এই বিশাল চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আগরবাতি তৈরি একটি লাভজনক ও স্থায়ী ব্যবসায়িক ধারণা হয়ে উঠেছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

গুগল থেকে মাসে আয় ৫০,০০০ টাকা! শুরু করুন এই কাজ এখনই - Google Adsense Income Idea

ব্যবসা শুরু করতে কী কী লাগবে?

এই ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়ে থাকে। আপনি চাইলে মাত্র ₹২৫,০০০–₹৪০,০০০ বিনিয়োগ করেই ঘরে বসে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। দরকার শুধু একটি ছোট ঘর বা ছোট স্থান, কিছু কাঁচামাল এবং একটি ম্যানুয়াল বা সেমি-অটোমেটিক আগরবাতি তৈরির মেশিন থাকার জায়গা থাকলেই হবে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ:

  1. বাঁশের কাঠি (Bamboo sticks)
  2. আগরবাতির গুঁড়া (কয়লার গুঁড়া, কাঠের ধুলো ইত্যাদি)
  3. পারফিউম বা সুগন্ধি তেল লাগবে
  4. রঙ বা ডাই (ঐচ্ছিক) বিভিন্ন
  5. আগরবাতি তৈরির মেশিন (ম্যানুয়াল বা সেমি-অটোমেটিক)

মেশিন এবং কাঁচামালের খরচ

বর্তমানে ইন্ডিয়া মার্ট বা লোকাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল মার্কেট থেকে একটি ম্যানুয়াল আগরবাতি মেশিন পাওয়া যায় ₹১০,০০০–₹১৫,০০০ টাকার এর মধ্যে। আর একটি সেমি-অটোমেটিক মেশিন কিনতে লাগবে ₹২০,০০০–₹২৫,০০০ টাকা। এর সঙ্গে শুরুতে ৫০ কেজি পাউডার, ২৫,০০০ কাঠি, সুগন্ধি ও কিছু প্যাকেট কিনলে মোট ইনভেস্টমেন্ট দাঁড়ায় ₹৩০,০০০–₹৪০,০০০ টাকা এর মধ্যে।

জানুন কীভাবে তৈরি হয় আগরবাতি?

আগরবাতি তৈরি করার প্রক্রিয়া খুব সহজ হয়ে থাকে। প্রথমে কাঠির ওপরে মেশানো গুঁড়া মেশিনের মাধ্যমে লাগানো হয়ে থাকে। তারপর সেটিকে রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়ে থাকে । শুকিয়ে গেলে তাতে পছন্দমতো সুগন্ধি স্প্রে করে প্যাক করা হয়ে থাকে । এই পুরো প্রক্রিয়া ২–৩ দিনের প্রশিক্ষণেই শিখে নেওয়া সম্ভব হয়।

কতটুকু সময় দিলে কত লাভ?

ধরুন আপনি প্রতিদিন মাত্র ৫ ঘণ্টা সময় দিয়ে ১০,০০০ আগরবাতি তৈরি করছেন। এক কেজিতে প্রায় ১,০০০টি আগরবাতি হয়ে থাকে। অর্থাৎ প্রতিদিন ১০ কেজি উৎপাদন করলে হয়ে থাকে। মাসে যদি ২৫ দিন কাজ করেন, তাহলে মোট উৎপাদন ২.৫ লাখ আগরবাতি হয়ে থাকবে।

বর্তমানে বাজারে এক হাজার আগরবাতির পাইকারি দাম ₹৮০–₹১০০ টাকা। তাহলে মাসে আপনার আয়ের পরিমাণ হতে পারে ₹২০,০০০–₹৩৫,০০০ টাকা। ব্র্যান্ডিং বা অনলাইন বিক্রির মাধ্যমে এই আয় দ্বিগুণ পর্যন্ত করতে পারেন।

কোথায় কোথায় বিক্রি করবেন?

বাজার গড়ার জন্য প্রথমে লোকাল খুচরা ও পাইকারি দোকানদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। মন্দির, পূজার সামগ্রীর দোকান, মোড়ের দোকান, এমনকি কিরানা স্টোরও আগরবাতির ভালো ক্রেতা হতে পারে। এর পাশাপাশি আপনি নিজেই একটি ছোট ব্র্যান্ড তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি শুরু করতে পারেন।

বিক্রির অনলাইন প্ল্যাটফর্ম:

  • Amazon, Flipkart, Meesho
  • Instagram, Facebook Page
  • WhatsApp Business

কোথায় শিখবেন আগরবাতি তৈরি?

বর্তমানে এটি শেখার জন্য ইউটিউবে অসংখ্য ভিডিও পাওয়া যায়। এছাড়াও এনএসআইসি (NSIC), খাদি গ্রাম উদ্যোগ, ডিস্ট্রিক্ট ইন্ডাস্ট্রি সেন্টার ইত্যাদি সংস্থা থেকে বিনামূল্যে বা খুব কম খরচে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। তারা অনেক সময় প্রজেক্ট রিপোর্টও সরবরাহ করে যাতে আপনি ব্যাংক লোন পেতে পারেন অনায়াসে।

নারীদের জন্য বিশেষ সুযোগ

বিশেষ করে গৃহিণীরা যাঁরা বাড়ির কাজের ফাঁকে কিছু করতে চান, তাঁদের জন্য এটি অসাধারণ একটি ব্যবসা হতে পারে। বাড়ি বসেই করা যায়, পরিবারের অন্য সদস্যদের সাহায্য নেওয়া যায় এবং সময় নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে থাকে। এটি নারীদের আত্মনির্ভর হওয়ার এক শক্তিশালী মাধ্যম হতে হতে চলেছে।

শিক্ষার্থীদের জন্য

অনেক ছাত্রছাত্রী রয়েছে পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন আয় করতে চান। আগরবাতি তৈরি ব্যবসা তাদের জন্য লাভজনক ও সহজ একটি পথ হতে পারে। অল্প সময়ে শেখা যায়, ইনভেস্টমেন্ট কম এবং আয় নিশ্চিত হবে।

ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চলের জন্য সুবর্ণ সুযোগ

গ্রামে কাঁচামাল সহজলভ্য হয়, মজুরি কম এবং প্রতিযোগিতা তুলনামূলকভাবে অবেক কম। এর ফলে ব্যবসা দ্রুত জমে ওঠে। ছোট শহরেও অনেক সময় খালি ঘর বা গ্যারেজ থেকে শুরু করা যায়, যেটি শহরের তুলনায় অনেক কম খরচে পাওয়া যায়।

ব্র্যান্ডিং ও প্যাকেজিংয়ের গুরুত্ব

আপনি যদি নিজের পণ্যে লেবেল লাগান, প্যাকেজিং ও ইউনিক ঘ্রাণ ব্যবহার করেন তাহলে তা দ্রুত জনপ্রিয়তা পেতে পারে। এছাড়াও ব্র্যান্ড নাম দিয়ে বিক্রি করলে পণ্যের মূল্য বাড়ে এবং গ্রাহকের ভরসা আরও বেশি বৃদ্ধি পাই।

কীভাবে বাড়াবেন আয়?

  1. প্রথমে নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করে বাজারে নামুন
  2. নতুন ঘ্রাণ ও প্যাকেট ডিজাইন যুক্ত করে ফেলুন
  3. অনলাইন রিভিউ ও কাস্টমার ফিডব্যাক সংগ্রহ করে ফেলুন
  4. লোকাল রিটেইলারদের ইনসেন্টিভ দিন বেশি বিক্রির জন্য

সাধারণত আগরবাতি তৈরি একটি সহজ, সাশ্রয়ী এবং লাভজনক ব্যবসা যা যেকোনো বয়সের নারী, যুবক বা গৃহস্থ মানুষ ঘরে বসেই শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে মাত্র ₹২৫,০০০–₹৩০,০০০ বিনিয়োগে শুরু করে মাসে ₹৩০,০০০–₹৪০,০০০ আয় করা একেবারেই সম্ভব ব্যাপার, যদি আপনি পরিশ্রম ও ধৈর্য নিয়ে কাজ করেন।

আপনি যদি এই ব্যবসা করতে আগ্রহী হন তাহলে এই ব্যবসা সম্পর্কে আগে বিস্তারিত জেনে নিবেন এবং তারপর এই ব্যবসা শুরু করলে অতি সহজেই সাফল্য অর্জন করতে পারেন।

আরও পড়ুন

মহিলারা পাবেন মাসিক ৭,০০০ টাকা সঙ্গে ফ্রী ট্রেনিং ও এজেন্ট হওয়ার সুযোগ! শুধু মাধ্যমিক পাশ থাকতে হবে - Bima Sakhi Yojna

Leave a Comment