কৃষি দপ্তরে স্কলারশিপ! ১০ম পাশে সর্বাধিক ৪০,০০০ অনুদান – Agriculture Department Scholarship 2025

Agriculture Department Scholarship 2025: ভারতে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে বিভিন্ন রাজ্য সরকার। তারই ধারাবাহিকতায়, এবার রাজস্থান সরকার কৃষি বিষয় নিয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রীদের জন্য চালু করল এক বিশেষ কৃষি স্কলারশিপ প্রকল্প, যার মাধ্যমে ১০ম শ্রেণি পাশ থেকে শুরু করে পিএইচডি পর্যন্ত পড়ুয়া ছাত্রীরা প্রতি বছর সর্বোচ্চ ₹৪০,০০০ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা পেতে পারে। এই উদ্যোগ মূলত রাজ্যের অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলোর মেধাবী ছাত্রীদের কৃষি শিক্ষায় আগ্রহ বাড়ানোর জন্যই গৃহীত।

বর্তমানে কৃষিক্ষেত্র দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড হলেও, এই বিষয়ে পড়াশোনায় আগ্রহ কমে যাচ্ছে নতুন প্রজন্মের মধ্যে। বিশেষত, কন্যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। সেই দিক থেকে এই নতুন স্কলারশিপ প্রকল্পটি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সরকার চায়, ছেলে ও মেয়ের মধ্যে শিক্ষাগত সুযোগ ও সম্মানের সমতা থাকুক, বিশেষ করে বিজ্ঞান ও কৃষি শিক্ষার ক্ষেত্রে।

কাদের জন্য এই স্কলারশিপ?

এই স্কলারশিপ প্রকল্প মূলত রাজস্থানের স্থায়ী বাসিন্দা ছাত্রীদের জন্য, যারা ১০ম শ্রেণি পাশ করে ভবিষ্যতে কৃষি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য প্রযোজ্য এই প্রকল্পটি ১০ম থেকে শুরু করে ১১-১২ শ্রেণি, স্নাতক (UG), স্নাতকোত্তর (PG) এবং পিএইচডি স্তরের কৃষি পড়ুয়াদের জন্য প্রযোজ্য।

এই প্রকল্পে ছাত্রীদের আগের ক্লাসে ভালো ফলাফল করা আবশ্যক। ভালো গ্রেড অর্জনকারী ছাত্রীদেরই এই স্কলারশিপে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এটি শুধুমাত্র একটি আর্থিক সহায়তা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার একটি কার্যকরী হাতিয়ার।

কত টাকা পর্যন্ত স্কলারশিপ পাওয়া যাবে?

রাজ্য সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, এই প্রকল্পে বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রীদের জন্য আলাদা করে স্কলারশিপের পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছে। নিচে ধাপে ধাপে দেওয়া হলো:

  • ১১ম ও ১২ম শ্রেণি: কৃষি বিষয় নিয়ে পড়া ছাত্রীদের জন্য প্রতি বছর ₹১৫,০০০ টাকা স্কলারশিপ।
  • স্নাতক স্তর (BSc Ag / BSc Hons Ag / কৃষি প্রকৌশল ইত্যাদি): প্রতি বছর ₹২৫,০০০ টাকা দেওয়া হবে।
  • স্নাতকোত্তর (MSc Ag): ২ বছর পর্যন্ত প্রতি বছর ₹২৫,০০০ টাকা।
  • পিএইচডি স্তর: সর্বোচ্চ ৩ বছর পর্যন্ত প্রতি বছর ₹৪০,০০০ টাকা।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ছাত্রীদের সরকারি বা রাজ্য সরকার অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করতে হবে। যেকোনো বেসরকারি, স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে এই কোর্স করলে তারা প্রকল্পের আওতায় আসবে না।

কারা স্কলারশিপ থেকে বঞ্চিত হবেন?

এই স্কলারশিপ প্রকল্পে কঠোর শর্তও রাখা হয়েছে যাতে প্রকৃত মেধাবী ও যোগ্য ছাত্রীরাই সুবিধা পায়। নিচের পরিস্থিতিতে কোনও ছাত্রী এই প্রকল্পের অধীনে স্কলারশিপ পাবেন না:

  • যদি কোনও ছাত্রী পূর্ববর্তী বছর ফেল করে, তাহলে ওই ক্লাসে পুনঃভর্তি নিয়ে পড়লেও সে স্কলারশিপ পাবে না।
  • যদি কোনও ছাত্রী একই ক্লাসে শ্রেণি উন্নতি (Improvement) করার জন্য পুনঃভর্তি নেয়, তাহলেও স্কলারশিপ দেওয়া হবে না।
  • ছাত্রীর যদি কৃষি ছাড়া অন্য বিষয় থাকে, তাহলে সে এই স্কলারশিপের উপযুক্ত নয়।
  • রাজ্যের বাইরে বা অস্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করলে স্কলারশিপ পাওয়া যাবে না।

আবেদন প্রক্রিয়া কেমন?

এই প্রকল্পে আবেদন করার জন্য রাজ্য সরকার “রাজ কৃষাণ পোর্টাল” চালু করেছে, যেখানে ছাত্রীরা অনলাইনে গিয়ে তাদের তথ্য যাচাই করে আবেদন করতে পারবে।

আবেদন করতে যা লাগবে:

  • আধার কার্ড
  • পূর্ববর্তী পরীক্ষার মার্কশিট
  • স্থায়ী বাসিন্দার শংসাপত্র
  • ভর্তি সংক্রান্ত নথি
  • ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ডিটেইলস

আবেদন ফর্ম পূরণ করার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যাচাই করিয়ে জমা দিতে হবে। রাজ্য সরকার এই আবেদনগুলো যাচাই করে নির্দিষ্ট সময়ে টাকা ছাত্রীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেবে।

কেন এই স্কলারশিপ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ?

রাজস্থানের মতো একটি রাজ্যে, যেখানে বহু পরিবার এখনও আর্থিকভাবে দুর্বল, সেখানে এই ধরনের স্কলারশিপ প্রকল্প নারীশিক্ষার প্রসারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, এটি একটি মানসিক উৎসাহের উৎস, যেখানে একজন ছাত্রী জানবে যে সরকার তার পাশে রয়েছে।

এছাড়াও, কৃষি শিক্ষার প্রতি সমাজে যে উদাসীনতা রয়েছে, তা থেকেও অনেকটা উত্তরণের পথ তৈরি করতে পারে এই উদ্যোগ। ছাত্রীদের স্বনির্ভর করতে হলে, কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের স্বতন্ত্র দক্ষতা গড়ে তুলতে হবে। রাজ্য সরকার এই স্কলারশিপের মাধ্যমে সেই দিকেই একটি দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে।

কৃষি ছাত্রবৃত্তি প্রকল্প নিঃসন্দেহে রাজস্থানের ছাত্রীদের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই প্রকল্প শুধুমাত্র শিক্ষার সুযোগ তৈরি করছে না, বরং এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিচ্ছে—যেখানে মেয়েরাও কৃষিক্ষেত্রে সমান গুরুত্ব পাবে এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতা তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না

যারা কৃষি নিয়ে পড়াশোনার পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য এখনই সময় সুযোগকে কাজে লাগানোর। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ যদি সঠিকভাবে কার্যকর হয়, তবে অদূর ভবিষ্যতে আমরা দেখতে পাব রাজস্থানের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও নারীরা কৃষি বিজ্ঞানী, গবেষক ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠছেন।

Leave a Comment