Bima Sakhi Yojna: দেশের গ্রামীণ ও আধা-শহরাঞ্চলের মহিলাদের আত্মনির্ভর করে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ভারত সরকারের উদ্যোগে শুরু করা হয়েছে এক অভিনব ও সময়োপযোগী প্রকল্প—বিমা সখী যোজনা। এই স্কিমের আওতায় দেশের লক্ষ লক্ষ মাধ্যমিক পাশ মহিলাদের ঘরে বসেই অর্থ উপার্জনের সুযোগ করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হলে সমাজের অর্ধেক জনসংখ্যা, অর্থাৎ মহিলাদের কর্মসংস্থানে সঙ্গে যুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাড়িয়েছে।আর সরকারের এই প্রকল্প ঠিক সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে। শুধুমাত্র মাধ্যমিক পাস করলেই এই যোজনায় অংশ নেওয়া সম্ভব তবে কেবল মহিলাদের জন্য, এবং মাসিক আয় ৭০০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়—তবে এ এক অনন্য সুযোগ, বিশেষ করে যারা সংসার সামলে বাড়িতেই কিছু কাজ করে অর্থ রোজগার খুঁজে থাকেন।
সরকারের বিমা সখী যোজনার মূল লক্ষ্য হল দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মহিলাদের চাকরির সুযোগ করে দেওয়া এবং LIC-এর এজেন্ট হিসাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের আর্থিকভাবে স্বাধীন করে তুলতে সাহায্য করা। এটি শুধুমাত্র একটি চাকরি নয় বা আয়বর্ধক প্রকল্প নয়, এটি একটি সামাজিক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপও বটে। নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় হতে চলেছে। গ্রামের বা ছোট শহরের অসংখ্য নারী যারা নানা কারণে বাইরে গিয়ে কাজ করতে অসুবিধা বোধ করেন, তাদের জন্য এই যোজনা হতে পারে এক পরিবর্তনের পথ। ঘরে বসেই আয় করার সুযোগ যেমন দিচ্ছে, তেমনই ভবিষ্যতে উন্নয়ন কর্মকর্তা বা ADO পদের সুযোগও থাকছে এই প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী মহিলাদের জন্য।
সম্পর্কিত পোস্ট
অনলাইনে কেনাকাটা! ৬৫% ছাড়ে মিলবে মেবাইল, ল্যাপটপ সহ অন্যান্য - Amazon Great Freedom Festival 2025সবথেকে বড় কথা হলো, এই প্রকল্পে যোগদানের জন্য প্রাথমিকভাবে যে শর্তগুলো পূরণ করতে হবে তা খুবই সাধারণ। আবেদনকারীর বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে এবং অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক থেকে কমপক্ষে দশম শ্রেণি পাশ হতে হবে। অর্থাৎ এমন কোনো কঠিন যোগ্যতা চাওয়া হয়নি এখানে, যা গ্রামীণ অঞ্চলের মহিলাদের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব। LIC এই প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী মহিলাদের তিন বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছে, এবং প্রথম বছর মাসিক ৭০০০ টাকা করে বেতন প্রদান করা হবে। দ্বিতীয় বছরে এই বেতন হয় ৬০০০ টাকা এবং তৃতীয় বছরে ৫০০০ টাকা হিসেবে দেওয়া হবে। শুধুমাত্র বেতনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, কর্মীরা কমিশন এবং ইনসেন্টিভও এর সুবিধাও পাবেন, যেটা নির্ভর করবে তাদের বীমা বিক্রির উপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ আয় বাড়ানোর আরও সুযোগ থাকছে এখানে।
সবথেকে বড় কথা হলো, এই প্রকল্পের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। মোট ৫ বছরের প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মহিলারা নিজেদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সুযোগ দেওয়া হয়। এর ফলে ভবিষ্যতে তারা চাইলে LIC-এর উচ্চতর পদেও আবেদন করতে পারবেন, যেমন ADO (Apprentice Development Officer) পদে। তবে এই পদের জন্য স্নাতক ডিগ্রি থাকা আবশ্যক। ফলে যারা শিক্ষিত এবং ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী, তাদের জন্য এটা হতে পারে একটি বিরাট সুযোগ।
আমরা সকলে জানি বর্তমানে LIC-এর বীমা পলিসি দেশের প্রতিটি কোণে পৌঁছে গেছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা যথেষ্ট বেশি দেখা যাচ্ছে। এর ফলে যারা এই প্রকল্পে নিযুক্ত হবেন, তাদের জন্য বীমা বিক্রি করা কঠিন হবে না। গ্রামে গ্রামে LIC-এর পলিসি সম্পর্কে মানুষ অবগত এবং আগ্রহী অনেকে রয়েছে। তাছাড়া মহিলাদের উপর ভরসা সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে বেশি হয়, এরফলে তাদের কাছ থেকে পরিষেবা নিতে কেউ দ্বিধা বোধ করবেন না।
এই প্রকল্পের আরেকটি গুরুত্বপূর্ন দিক হলো এটি সমাজে নারীদের ভূমিকা পরিবর্তনে সাহায্য করতে চলেছে। গ্রামীণ নারী, যাদের জীবন এতদিন কেবল গৃহস্থালির মধ্যেই আবদ্ধ ছিল, তারা আজ নিজের পরিবারের আর্থিক দায়িত্বে অংশ নিতে পারছেন এই যোজনার মাধ্যমে। শুধুমাত্র নিজের নয়, পুরো সমাজের চেহারাই বদলাচ্ছে এই প্রকল্পের হাত ধরে। নারীরা কেবল আর গৃহিণী নন, তারা আজ এক একজন উদ্যোক্তাও বটে, এক একজন কর্মজীবী।
জানা গিয়েছে, এখনো পর্যন্ত এই প্রকল্পে প্রচুর মহিলা নিযুক্ত হয়েছেন এবং তারা সফলভাবে কাজ করছেন। LIC নিজেই এই কর্মীদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। অনেকেই নিজেদের জীবনের প্রথম রোজগার এই প্রকল্পের মাধ্যমে করেছেন। অনেক মহিলার পক্ষে নিজের আত্মসম্মান অর্জন সম্ভব হয়েছে এর মাধ্যমে , কারণ তারা আজ নিজের উপার্জনে নিজের পরিবারকে সাহায্য করতে পারছে।
এছাড়া বড় কথা হলো, এই প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদিত, তাই এতে প্রতারণার কোনো আশঙ্কা থাকছেনা। আবেদন পদ্ধতিও বেশ সহজ এখানে। দেশের যেকোনো রাজ্যের মহিলা LIC অফিসে গিয়ে অফলাইনে অথবা অনলাইনে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। এতে কোনো এজেন্টের সাহায্য বা বাড়তি খরচের প্রয়োজন নেই। আবেদন করার পর নির্দিষ্ট ট্রেনিং ও যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কর্মী হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে।
সবশেষে বলা যায়, LIC বীমা সখী যোজনা শুধুমাত্র একটি রোজগারের রাস্তা নয়, এটি নারীদের জন্য একটি আত্মমর্যাদার পথও বটে। বিশেষ করে, সরকারের এই পদক্ষেপ সমাজের চিত্র পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে যদি এর সুফল দেশের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে যায়। যারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান, ঘরে বসেই কাজ করতে চান, তাদের জন্য এই প্রকল্প হতে পারে সোনার সুযোগ। তাই সময় নষ্ট না করে, এখনই LIC-এর নিকটস্থ অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন এবং নিজের জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করুন।
তাই এই স্কিম শুধুমাত্র আজকের রোজগার নয়, আগামী দিনের আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার হাতিয়ার হিসেবেও চিন্তিত হবে। ভারতের নারীরা যেন শুধু সংসার নয়, সমাজ ও অর্থনীতির অগ্রগতিতেও প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারেন, এই উদ্যোগ সে পথকেই প্রশস্ত করছে ।

NJ Team Writes content for 5 years. I have well experience in writing content in different niches. Please follow us regularly for getting genuine and authentic information.