PM Karam Puja Scheme: ভারত সরকার হোক কিংবা রাজ্য সরকার উভয়ে রাজ্যের এবং দেশের বাসিন্দাদের জন্য নতুন ধরনের প্রকল্প নিয়ে আসেন। বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে রাজ্য সরকার হোক কিংবা কেন্দ্র সরকার উভয়ে নানা ধরনের কর্মসূচি নিয়ে আসেন। এবার সামনে যেহেতু পূজো তাই সেই উপলক্ষে ফের কেন্দ্র সরকারের এক স্কিম সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। আজকের প্রতিবেদনে আমরা তার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে যাচ্ছি
ভারতের প্রান্তিক শ্রেণির কারিগর শ্রেণি ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য কেন্দ্র সরকারের একটি যুগান্তকারী প্রকল্প হয়ে উঠেছে “PM বিশ্বকর্মা যোজনা” হিসেবে।সাধারণত বিশ্বকর্মা পুজোর দিন এই প্রকল্প চালুর মাধ্যমে সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল দেশের ঐতিহ্যবাহী পেশাজীবী মানুষদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা, দক্ষতা উন্নয়ন ও ডিজিটাল বিকাশে সাহায্য করে থাকা।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য কী?
আসলে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা চালুর মূল লক্ষ্য হল, সেই সমস্ত প্রান্তিক কারিগর শ্রেণি ও শ্রমজীবী মানুষদের ক্ষমতায়ন, যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে হাতে গড়া পণ্য তৈরি করে জীবনযাপন করছে। কাঠমিস্ত্রি, লৌহশিল্পী, সোনার কাজ করা শিল্পী, মাটির কাজ, বাঁশ ও বেতশিল্পী, জুতো তৈরি করা মুচি সহ অন্যান্য – এমন ১৮টি ঐতিহ্যবাহী পেশা এই প্রকল্পের আওতায় আসতে বলে জানা যায়।
তাই কেন্দ্র সরকার চাইছে এই সমস্ত ‘বিশ্বকর্মা’দের আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়া, আর্থিক সহায়তা করা এবং মার্কেটিং সাপোর্ট দিয়ে আত্মনির্ভর করে গড়ে তোলা।
প্রকল্প কবে চালু হয়েছে?
কেন্দ্র সরকারের এই প্রকল্পটি ২০২৩ সালে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছিল। এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন রাজ্য ও জেলা পর্যায়ে এর রেজিস্ট্রেশন ও কার্যকরী পদক্ষেপ শুরু করা হয়ে থাকে। ইতিমধ্যেই ২৬ লক্ষেরও বেশি মানুষ এই প্রকল্পে রেজিস্ট্রার্ড হয়েছেন বলে রিপোর্ট।
বাজেট বরাদ্দ কত?
এই প্রকল্পটির জন্য ভারত সরকার মোট ১৩,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন বলে জানা যায়। এই অর্থ ২০২৩ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ধাপে ধাপে খরচ করা হতে পারে বলে জানা যায়। এটি একটি কেন্দ্রীয়ভাবে স্পন্সরড স্কিম হতে পারে, যা MSME মন্ত্রকের অধীনে পরিচালিত করা হচ্ছে।
প্রকল্পের মূল সুবিধাগুলি কী কী?
১. মাসিক প্রশিক্ষণ ভাতা
সকল রেজিস্টার্ড কারিগরকে সরকার ৫ থেকে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিবে। প্রশিক্ষণের সময় প্রতিদিন ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ, ১৫ দিনের প্রশিক্ষণে মোট সর্বাধিক প্রায় ₹৭৫০০ পর্যন্ত ভাতা মিলতে পারে।
২. ১৫,০০০ টাকার টুলকিট ই-ভাউচার
শিল্পীদের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনতে ₹১৫,০০০ টাকার একটি ই-ভাউচার প্রদান করা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে ডিজিটাল মোডে নির্দিষ্ট সরবরাহকারীদের কাছ থেকে যন্ত্রপাতি কেনা যাবে বলে জানা যায় ।
৩. দুই ধাপে লোনের সুযোগ
PM Vishwakarma Yojana-এর আওতায় কারিগররা দুই ধাপে লোনও পেতে পারেন—
- প্রথম ধাপ: ₹১ লক্ষ টাকা, ১৮ মাসের জন্য পেতে পারেন
- দ্বিতীয় ধাপ: ₹২ লক্ষ টাকা, ৩০ মাসের জন্য পেতে পারেন
বড় কথা হলো সুদ মাত্র ৫%। এই লোনে কোনো কোল্যাটারাল বা জামিনদার লাগে না, অর্থাৎ এটি সম্পূর্ণ Collateral-Free Loan হয়ে থাকে।
৪. সার্টিফিকেট ও আইডি কার্ড
আরও সুবিধা হলো প্রতিটি রেজিস্টার্ড প্রার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয় “বিশ্বকর্মা সার্টিফিকেট” এবং একটি ইউনিক ডিজিটাল আইডেন্টিটি কার্ডও , যা পরবর্তী সরকারি ও বেসরকারি কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৫. ডিজিটাল লেনদেন ও মার্কেটিং সাপোর্ট
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ডিজিটাল পেমেন্টে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে, যাতে শিল্পীরা ক্যাশলেস লেনদেন শিখে অনলাইন মার্কেটে পণ্য বিক্রি করতে জানতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারের GEM (Government e-Marketplace) প্ল্যাটফর্মে পণ্য তুলে ধরার সুবিধাও থাকবে তাদের জন্য।
কে কে আবেদন করতে পারবেন?
যোগ্যতা:
- বয়স ১৮ বছরের বেশি থাকতে হবে
- ভারতীয় নাগরিক হতে হবে
- ঐতিহ্যবাহী কোনো পারিবারিক পেশায় যুক্ত থাকা
- সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত না হওয়া
- অন্যান্য সরকারি স্কিমে লোন খেলাপি না থাকা
অন্তর্ভুক্ত পেশার তালিকা (মূল ১৮টি):
- কাঠমিস্ত্রি
- লৌহশিল্পী
- চামড়াশিল্পী
- সোনার কাজ
- মৃৎশিল্পী
- বাঁশ/বেতশিল্প
- ধোপা
- নাপিত
- দর্জি
- জুতো সেলাইকার
- মিষ্টি তৈরি
- মোবাইল মেরামতি
- দুধ বিক্রেতা
- ইলেকট্রিশিয়ান
- রাজমিস্ত্রি
- মাছ ধরার জাল তৈরি
- খেলনা তৈরি
- ছুতার কাজ
আবেদন প্রক্রিয়া: কীভাবে করবেন?
অনলাইনে আবেদন:
- সরকারি ওয়েবসাইটে (https://pmvishwakarma.gov.in) যেতে পারে
- ‘Apply Online’ অপশনে ক্লিক করতে হবে
- আধার নম্বর, মোবাইল ও ব্যাঙ্ক ডিটেলস দিতে হবে
- ওটিপি ভেরিফিকেশনের পর অন্যান্য তথ্য পূরণ করতে হবে
- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করে আবেদন জমা দিতে হবে
অফলাইনে আবেদন:
নিকটবর্তী CSC (Common Service Center)-এ গিয়ে ফর্ম ফিলাপ করে আবেদন করতে পারেন।এখানে আধার, ছবি, ব্যাঙ্ক ডিটেলস ও পেশার প্রমাণ ডকুমেন্টস সাথে রাখতে হবে।
আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
- আধার কার্ড
- ব্যাঙ্ক পাসবুক
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- মোবাইল নম্বর
- পরিবারের পেশার প্রমাণ (যেমন পিতার পেশা)
- কারিগরি কাজের নমুনা বা ভিডিও (অপশনাল)
এই প্রকল্পের স্টেটাস কীভাবে জানবেন?
আবেদনের পরে নিজের রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাবেন এবং তা দিয়ে আপনি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে লগইন করে PM Vishwakarma Yojana Application Status চেক করতে পারবেন।
কবে পাবেন টাকা?
সাধারণত অনলাইনে আবেদন যাচাইয়ের পর প্রশিক্ষণের সময়ই ভাতা দেওয়া শুরু হয়ে যায়। আর লোন পাওয়ার জন্য প্রয়োজন হবে ব্যাংক যাচাই ও স্থানীয় আধিকারিকের সুপারিশও। এনিয়ে সরকার জানিয়েছে, আবেদন করার ৬০ দিনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের সুবিধা পাওয়া সম্ভব যদি সব ঠিকঠাক থাকে।
তাই PM বিশ্বকর্মা প্রকল্প বাংলার কারিগর সমাজের জন্য এক ঐতিহাসিক সুযোগ হতে পারে। শুধুমাত্র ₹১৫,০০০ টাকার টুলকিট ভাউচার নয়, সঙ্গে প্রশিক্ষণ, দৈনিক ভাতা, এবং তিন লক্ষ পর্যন্ত লোনের সুবিধা থাকছে– সব মিলিয়ে এটি একটি পরিপূর্ণ আত্মনির্ভর প্রকল্প হতে পারে। সরকারি প্রকল্পগুলিকে যদি ঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়ে থাকে, তাহলে বাংলার গ্রামগঞ্জেও আর্থিক বিপ্লব সম্ভব হবে।
তাই দেরি না করে এখনই আবেদন করুন এবং আপনার ব্যবসার নতুন অধ্যায় শুরু করুন।

NJ Team Writes content for 5 years. I have well experience in writing content in different niches. Please follow us regularly for getting genuine and authentic information.