মাত্র ৫০ টাকা জমিয়ে ৩৫ লক্ষ রিটার্ন! দেখুন বিস্তারিত – Post Office Gram suraksha scheme

Post Office Gram suraksha scheme:  এবার মাত্র ৫০ টাকা জমিয়ে ভবিষ্যতে ৩৫ লক্ষ টাকা পাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে ভারতের ডাক বিভাগ কর্তৃক। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও এটাই সত্যি, পোস্ট অফিসের একটি বিশেষ স্কিমের অধীনে গ্রামবাসীরা এমনই একটি রিটার্ন পেতে পারেন বলে জানা যায়। আর এই স্কিমটির নাম ‘গ্রাম সুরক্ষা যোজনা’। এটি মূলত ভারত সরকারের একটি রুরাল পোস্টাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স প্রকল্পের মধ্যে পরে, যার লক্ষ্য গ্রামীণ মানুষের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা।

এদিকে বর্তমানে দেশের অনেক মানুষই উচ্চ রিটার্ন-এর আশায় বিভিন্ন বেসরকারি স্কিমে বিনিয়োগ করছেন, যেখানে ঝুঁকির পরিমাণও অনেক বেশি থাকে। কিন্তু পোস্ট অফিসের এই স্কিমে বিনিয়োগ করলে একদিকে যেমন নিশ্চিন্তে টাকা রাখা সম্ভব, তেমনই ভবিষ্যতে বড় অঙ্কের অর্থও হাতে পাওয়া যায় এর মাধ্যমে। কারণ এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবে ভারত সরকারের অধীনস্থ এবং এর রিটার্ন সরকার নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী প্রদান করা হবে।

পোস্ট অফিসের গ্রাম সুরক্ষা যোজনায় বিনিয়োগ শুরু করা যায় মাত্র ১৯ বছর বয়স থেকে এবং সর্বাধিক বয়সসীমা ৫৫ বছর পর্যন্ত সুবিধা পেতে পারেন। অর্থাৎ এই বয়সসীমার মধ্যে কেউ যদি এই স্কিমে যোগ দেন, তাহলে তাঁরা ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় সুরক্ষার পথে হাঁটতে আসতে চলেছেন। এই স্কিমের আওতায় সাম অ্যাসিওর্ড অর্থাৎ বিমাকৃত পরিমাণ নির্ধারণ করা যায় ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।

এই বিমার প্রিমিয়াম অর্থাৎ মাসিক কিস্তির পরিমাণ নির্ভর করে বিমাকৃত অর্থ এবং বিমার মেয়াদের উপর ভিত্তি করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও ব্যক্তি দৈনিক ৫০ টাকা বা মাসে আনুমানিক ১,৫১৫ টাকা জমা রাখেন, তাহলে স্কিমটির মেয়াদ শেষে তিনি প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকার রিটার্ন পেতে পারেন আপনিও। তবে এই রিটার্ন নির্ভর করে নির্দিষ্ট শর্তাবলীর উপর, যেমন এই পলিসির সময়সীমা, নিয়মিত প্রিমিয়াম প্রদান করা, এবং মধ্যবর্তী সময়ে কোনো সারেন্ডার না করা ইত্যাদি।

এই স্কিমের আরও একটি বড় সুবিধা হল, বিমাকৃত ব্যক্তি চাইলে নির্দিষ্ট বয়সে প্রিমিয়াম বন্ধ করার জন্য আবেদনও জানাতে পারেন। সাধারণত ৫৫ বছর, ৫৮ বছর এবং ৬০ বছর বয়সে প্রিমিয়াম বন্ধ করার অপশন রয়েছে এই স্কিমে। এতে ব্যক্তির উপর অর্থনৈতিক চাপও কিছুটা কমে যায়। এবং যখন স্কিমটির ম্যাচিউরিটি সময় আসে, তখন পুরো সাম অ্যাসিওর্ডের সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত হয় দীর্ঘ মেয়াদি বোনাস। এই বোনাস নির্ভর করে কত বছর ধরে প্রিমিয়াম দেওয়া হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে।

পোস্ট অফিসের এই স্কিমে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মৃত্যু পরবর্তী সুবিধা। এদিকে বিমাকৃত ব্যক্তির অকাল মৃত্যু হলে, তাঁর নমিনেটেড ব্যক্তি বা পরিবারের সদস্যরা পুরো বিমাকৃত টাকা এবং বোনাস পুরোটাই পেয়ে থাকেন। এটি সেইসব পরিবারের জন্য একটি বিরাট সহায়তা, যাঁদের রোজগার একমাত্র নির্ভরশীল ব্যক্তি আকস্মিকভাবে চলে যান।

এছাড়াও পোস্ট অফিসের এই স্কিমটি কর ছাড়েরও সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে। আয়কর আইন ৮০সি-এর অধীনে এই স্কিমে বিনিয়োগ করলে কর রেয়াত পাওয়া যায়। অর্থাৎ এটি একদিকে যেমন ভবিষ্যতের জন্য সুরক্ষা দেয়, তেমনই বর্তমানে কর সাশ্রয়েও সাহায্য করে থাকে।

ভারতীয় পোস্ট অফিসের রুরাল পোস্টাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স স্কিমগুলি মূলত গ্রামীণ জনগণের জন্য চালু করা হয়েছে, যাতে তাঁরা কম ঝুঁকিতে সাশ্রয় করতে পারেন এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য আর্থিক ভরসা গড়ে তুলতে পারেন। গ্রাম সুরক্ষা যোজনা তার মধ্যে অন্যতম। এই স্কিমের একটি আকর্ষণীয় দিক হল, এটি সরাসরি পোস্ট অফিস থেকে চালু করা যায় এবং গ্রামাঞ্চলের প্রায় সব ডাকঘরেই এর পরিষেবা পাওয়া যায়। কোনও রকম দালাল বা অতিরিক্ত ফি ছাড়াই সাধারণ মানুষ এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

বর্তমানে যারা LIC বা অন্য বেসরকারি বিমা সংস্থার হাই প্রিমিয়াম দেখে বিমা করতে দ্বিধায় ভোগেন, তাঁদের জন্য গ্রাম সুরক্ষা যোজনা একটি বড় সুযোগ হতে পারে। কম বিনিয়োগে দীর্ঘমেয়াদী বড় রিটার্ন পাওয়ার এই সুবিধা অন্য কোনও সাধারণ স্কিমে সচরাচর পাওয়া যায় না। তাছাড়া এটি সম্পূর্ণ সরকার অনুমোদিত এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে ঝুঁকিমুক্ত।

অনেক সময় আমরা দেখে থাকি, গ্রামের সাধারণ মানুষ ব্যাংকিং বা বিমা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হন নানা জটিলতার কারণে। পোস্ট অফিসের এই স্কিমের মাধ্যমে সেই বাধা ভাঙা সম্ভব। যেহেতু দেশের প্রতিটি কোণায় পোস্ট অফিস রয়েছে, তাই গ্রামীণ মানুষ সহজেই তাদের কাছাকাছি পোস্ট অফিসে গিয়েই এই স্কিমে নাম লেখাতে পারেন।

এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, পোস্ট অফিসের গ্রাম সুরক্ষা যোজনা ভবিষ্যতের জন্য একটি ‘Low Investment, High Return’ প্রকল্প। যারা নিয়মিত সেভিংস করতে চান এবং একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে একটি আর্থিক গ্যারান্টি চান, তাঁদের জন্য এই স্কিম খুবই উপযোগী হতে চলেছে। এছাড়াও যাঁরা মাসে বড় অঙ্কের টাকা জমানোর ক্ষমতা রাখেন না, কিন্তু ভবিষ্যতে একটি স্থায়ী সঞ্চয় চান, তাঁরাও এই স্কিমের মাধ্যমে বড় পরিমাণ রিটার্ন পেতে পারেন।

সব মিলিয়ে শেষে বলাই যায়, পোস্ট অফিসের গ্রাম সুরক্ষা যোজনা শুধু একটি বিমা নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক নিরাপত্তার হাতিয়ার।এখানে সামান্য দৈনিক সঞ্চয়ের মাধ্যমে যদি কেউ ভবিষ্যতে লক্ষাধিক টাকার অধিকারী হন, তাহলে এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে?

যাঁরা এখনও এই স্কিমের কথা শোনেননি বা দ্বিধায় রয়েছেন যে স্কিমের জন্য নানা সঞ্চয়ে রয়েছেন, তাঁদের উচিত নিকটবর্তী পোস্ট অফিসে গিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া এবং প্রয়োজন মতো বিনিয়োগ শুরু করা। আজকের ৫০ টাকার সঞ্চয়ই আগামীদিনে হতে পারে আপনার পরিবারের রক্ষাকবচ।

Leave a Comment