WB Govt Giving Land : রাজ্যে একদিকে যখন বেকারত্বের চাপ বেড়েই চলেছে, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ—এর মধ্যেও মমতা সরকার এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে সাধারণ মানুষের জন্য যাতে তােদর স্বনির্ভরতার দ্বার খুলে যেতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ঘোষণা করে জানিয়েছেন, রাজ্যের 23টি জেলা থেকে সরকার নতুন কর্মসূচি শুরু করা হচ্ছে। কিন্তু এখানেই শেষ কথা নয়—এই সমস্ত মলের জন্য সরকার জমি দেবে 1 টাকায়!
এই সিদ্ধান্ত যেমন সাধারণ উদ্যোক্তাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ হতে চলেছে, তেমনি রাজ্যের মহিল জন্যও এক নতুন আত্মনির্ভরতার রাস্তা খুলে যাচ্ছে।
আসুন, এই অভূতপূর্ব সিদ্ধান্তের পেছনের উদ্দেশ্য কি, সুযোগ কি কি, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।
মুখ্যমন্ত্রীর ভাষ্য: “দু’টি ফ্লোর আমার চাই, আমার মেয়েদের জন্য চাই”
সম্প্রতি আলিপুরে নবনির্মিত চর্ম ও কুটির শিল্প কেন্দ্র ‘শিল্পান্ন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস ছিল স্পষ্ট। তিনি বলেন, যে
“বিচেষ করে যারা বানাবে, তাদের জন্য একটাই শর্ত— দুটো ফ্লোর আমার চাই। বাকি জায়গায় আপনারা সিনেমাহল, কফিহাউস, যা খুশি করতে পারেন। শপিং মল আপনারা ছ’তলা, সাততলা বা আটতলা যত বড়ই বানাতে পারেন আমার দেখার দরকার নেই।”
কেন এই উদ্যোগ ব্যতিক্রমী?
আমরা সকলে জানি পশ্চিমবঙ্গে এর আগে বহু সরকারি প্রকল্প এসেছে, কিন্তু এই প্রকল্প একাধিক কারণে আলাদা হতে চলেছে :
- উদ্যোক্তাদের জন্য জমির সহজলভ্যতা: যে কোনো কাজ শুরু করতে সাধারণত জমির দামই একটি বড় বাধা হয়। এই উদ্যোগে মাত্র 1 টাকায় জমি দিচ্ছে সরকার, যা ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধা করে দেবে।
- মহিলা ক্ষমতায়নের বাস্তব রূপ: বিশেষ করে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা এতদিন গ্রামীণ হাটে বা সরকারি মেলা নির্ভর ছিলেন। এবার তারা নিজেদের দোকান নিয়ে ঢুকতে পারবেন আধুনিক শপিং মলের মধ্যে। এতে বাড়বে মর্যাদা, সঙ্গে বিক্রি ও আত্মবিশ্বাসও।
- সিনেমা হল, কফি শপ, রেস্টুরেন্টে মিশ্র বাণিজ্যিক গঠন: একটি মলে সবকিছু একসাথে থাকলে দর্শক বা ক্রেতার সংখ্যাও বাড়তে পারে। যা সব ব্যবসার জন্যই লাভজনক একটি বিষয়।
কারা এই জমি ও শপিং মল নির্মাণে অংশ নিতে পারবেন?
মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে বিস্তারিত না বললেও অনুমান করা যাচ্ছে যে:
- প্রাইভেট ডেভেলপার সংস্থাগুলি আবেদন করতে পারেন
- বিল্ডাররা নিজস্ব পুঁজিতে নির্মাণ করতে পারেন
- সরকার নির্ধারিত জায়গায় নির্মাণ অনুমতি দিয়ে দেবে
বিশেষ করে ডেভেলপারদের জন্য এটা লাভজনক সুযোগ হতে চলেছে, কারণ জমির খরচ প্রায় নেই বললেই চলে। শর্ত কেবল দু’টি ফ্লোর রাজ্য সরকারকে ছেড়ে দেওয়া।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েরা কীভাবে উপকৃত হবেন?
এখানেই এই প্রকল্পের সবচেয়ে মানবিক দিক। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়,
সরকার নিজেই বলে দিয়েছেন “দুটি ফ্লোর আমার চাই আমার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েদের জন্য।”
এই ফ্লোরে থাকবে:
- হস্তশিল্প পণ্য বিক্রির নানা স্টল
- খাদ্যপ্রস্তুত সামগ্রীর বিক্রয়ের নানা কেন্দ্র
- তাঁতের শাড়ি, চামড়ার সামগ্রী, গ্রামীণ পণ্য
যেখানে আগে এই নারীরা সপ্তাহে দুদিন হাটে বসে বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছিলেন, এখন তাঁরা ৭ দিন খোলা আধুনিক দোকানে বসার সুযোগ পাবেন। এতে বিক্রি যেমন বাড়বে, তেমনই তৈরি হবে এক নতুন শ্রেণির মহিলা উদ্যোক্তারাি।
শিল্পান্ন: চামড়া ও কুটির শিল্পের মেলবন্ধন
এই দিনেই মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করে যে ‘শিল্পান্ন’ নামক একটি বিশেষ শপিং স্পেস, যেখানে থাকবে:
- ৪৬টি দোকান সুবিধা
- থাকবে চামড়া শিল্পের প্রোডাক্ট
- বাংলার ঐতিহ্যবাহী শাড়ি থাকবে
তবে এটা শুধু একটা শপিং কমপ্লেক্স নয়, বরং এক সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক আইকন হয়ে উঠতে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, “চর্মশিল্পে বাংলা এখন এক নম্বরে রয়েছে।”
কীভাবে আবেদন করবেন এই জমির জন্য?
এই মুহূর্তে সরকারিভাবে কোনো নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট বা পোর্টালের চালু করা হয়নি। তবে ভবিষ্যতে রাজ্য সরকারের MSME বিভাগ বা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন।
এদিকে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, এই জমির বরাদ্দ হবে:
- আবেদনকারী সংস্থার ব্যবসায়িক পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে
- নির্মাণ পরিকল্পনা ও সময়সীমা থাকবে
- সরকারের শর্ত পূরণের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হবে
এই প্রকল্পের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ
যেকোনো বড় উদ্যোগের মতোই কিছু চ্যালেঞ্জ থাকবেই:
| চ্যালেঞ্জ সমূহ | সমাধানের দিক |
|---|---|
| জমি সংক্রান্ত আইনি জট থাকতে পারে | জেলা প্রশাসন সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকবে |
| নির্মাণে বিলম্ব হওয়া | নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হতে পারে |
| সরকারি ফ্লোরের রক্ষণাবেক্ষণ | মহিলা ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দায়িত্বে রাখা যেতে পারে |
| প্রাইভেট ডেভেলপারদের অনীহা | একাধিক ইনসেনটিভ ঘোষণা করে আকর্ষণ বাড়ানো যেতে পারে |
ভবিষ্যতের দিশা: রাজ্যে ব্যবসার পরিবেশ গঠনের সূচনা?
আমাদের রাজ্যে এই প্রকল্পকে যদি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে তা হতে পারে রাজ্যের বাণিজ্যিক চিত্র বদলে দেওয়ার প্রথম ধাপও বটে।
- জেলা সদরগুলোতে আধুনিক মল তৈরি হনে
- মহিলা উদ্যোক্তাদের নিজস্ব জায়গা পাবে
- বিল্ডারদের বিনিয়োগের আগ্রহ পাবে
- লোকাল হস্তশিল্পের নতুন বাজার গড়ে উঠবে
এই সবকিছু মিলে রাজ্যে এক নতুন অর্থনৈতিক পরিবেশ তৈরি হতে চলেছে যা বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
স্বপ্ন নয়, বাস্তব রূপ নিচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন
শেষে বলা যায়, মাত্র 1 টাকায় জমি—এটা কোনো রাজনৈতিক স্লোগান নয়, বরং এা বাস্তবতাও বটে। যদি পরিকল্পনা মাফিক এগোনো সম্ভব হয়ে থাজে, তাহলে এই উদ্যোগ বাংলার স্বনির্ভর গোষ্ঠী, বিভিন্ন হস্তশিল্প শিল্পী এবং নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাড়াবে।










