WB Govt New Scheme: রাজ্য সরকার সাধারণত রাজ্যবাসীর জন্য নতুন নতুন প্রকল্প নিয়ে আসে কিন্তু এবার যে প্রকল্প নিয়ে এসেছে তার রাজ্যবাসীর চোখে তাক লাগিয়েছে। কেননা এবার এমন প্রকল্প নিয়ে এসেছে যেখানে রাজ্যের প্রচুর মানুষ প্রায় একটি মাত্র আবেদনে পাঁচ হাজার টাকা পেতে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে ঘোষণা করল এক অভিনব উদ্যোগ হতে চলেছে, প্রকল্পটি হল — ‘শ্রমশ্রী প্রকল্প’।
রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্য, ভিন রাজ্যে কর্মরত বাঙালি শ্রমিকদের নিরাপদে ঘরে ফিরিয়ে এনে, আর্থিক সহায়তা, প্রশিক্ষণ, এবং চাকরির মাধ্যমে স্বনির্ভর করে গড়ে গোলা। এটি কেবলমাত্র একটি পুনর্বাসন প্রকল্প নয়, বরং একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক রূপান্তরের নয়া দিশা হতে পারে।
সম্পর্কিত পোস্ট
আয় ১-২ লাখ, সরকারি লোন সুবিধা সঙ্গে পরিবেশবান্ধব ব্যবসা, নিজেই মালিক হন - Business Ideaপ্রকল্পের পটভূমি ও প্রয়োজনীয়তা
আমরা সকলে জানি, ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের সমস্যা দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে অন্যভাষী রাজ্য যেমন, মহারাষ্ট্র, কেরল কিংবা দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকরা নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত আছে। কিন্তু, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বহু ঘটনা সামনে এসেছে যেখানে বাংলার শ্রমিকরা নানা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, এমনকি প্রাণও হারিয়েছেন অনেকে।
শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে একাধিকবার এই সমস্যার কথা উল্লেখও করেছেন এবং অবশেষে একটি বাস্তবমুখী সমাধান হিসেবে ঘোষণা করেছেন ‘শ্রমশ্রী প্রকল্প’ এর কথা।
এই প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল:
- ভিন রাজ্যে হেনস্থার শিকার শ্রমিকদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে হবে
- তাদের দক্ষতা অনুযায়ী পুনর্বাসন ব্যবস্থা করা
- নিজ রাজ্যেই সম্মানের সঙ্গে জীবনধারণের সুযোগ করে দেওয়া
- রাজ্যের শ্রম শক্তিকে স্থানীয় শিল্পে কাজে লাগানো দরকার
- গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা গতিময় রাখা দরকার
‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পের অধীনে যে সুবিধাগুলি মিলবে
১. আর্থিক সহায়তা
আর ফেরত আসা প্রত্যেক শ্রমিককে দেওয়া হবে এককালীন ৫০০০ টাকা ভাতা হিসেবে , এটি দেওয়া হবে যাতে তারা যাতায়াত খরচ বহন করতে পারেন। শুধুমাত্র ফিরিয়ে আনা নয়, ফিরিয়ে এনে পরবর্তী ১২ মাস পর্যন্ত মাসিক ৫০০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে, যদি তারা কাজ না পেয়ে থাকেন।
২. দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণ
যাঁদের দক্ষতা নেই বা নতুন কাজে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হবে, তাঁদের জন্য “উৎকর্ষ বাংলা” প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে স্কিল ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেমন:
- ইলেকট্রিশিয়ান ট্রেনিং
- মোবাইল রিপেয়ারিং
- সৌরবিদ্যুৎ সংক্রান্ত কোর্স
- কাপড় সেলাই
- হসপিটালিটি ও কাস্টমার কেয়ার
প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেককে একটি শংসাপত্রও দেওয়া হবে, যা তাদের চাকরি পেতে সাহায্য করবে বলে অনুমান।
৩. কর্মসংস্থানের সুযোগ
প্রশিক্ষণের পর বা দক্ষতা বিচার করে, শ্রমিকদের কাজ দেওয়া হতে পারে বলে জানা যায়। এর জন্য ‘কর্মশ্রী প্রকল্প’-এর আওতায় নতুন জব কার্ড তৈরি করে কর্মসংস্থান দেওয়া হতে পারে। কর্মশ্রী প্রকল্প ইতিমধ্যেই:
- ৭ কোটি ৮০ লক্ষ জব কার্ড ইস্যু করেছে
- ৯১ কোটি শ্রমদিবস তৈরি করেছে
- ১০০ দিনের কাজের বিকল্প হয়ে উঠেছে
এই কার্ড থাকা মানেই ন্যূনতম নির্দিষ্ট কাজ নিশ্চিত হওয়া।
৪. স্বনির্ভরতার সুযোগ
এদিকে যারা ব্যবসা করতে চান, যেমন মুরগির খামার, দুধের ব্যবসা, মুদি দোকান, ছোট কারখানা – তাঁদের জন্য সরকারি ঋণের সুবিধা দেওয়া হবে বিভিন্ন দপ্তর যেমন:
- সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিগম
- ওবিসি উন্নয়ন নিগম দপ্তর
- এসসি ও এসটি উন্নয়ন নিগম
- উদীয়মান স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্প
জানানো হয়,এইসব সংস্থার মাধ্যমে সহজ শর্তে লোন পাওয়া যাবে। কোনও ধরনের জামিন বা উচ্চ ক্রেডিট স্কোরও থাকতে হবে না।
প্রকল্পে কারা আবেদন করতে পারবেন
যোগ্যতা:
- পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হতে হবে
- যাঁরা ভিন রাজ্যে কাজ করে হেনস্থার শিকার হয়ে ফিরেছেন বা ফিরতে চান তাদের জন্য
- যাঁরা ১৮ বছর থেকে ৫০ বছরের মধ্যে হবে
- যাঁদের নাম শ্রম দপ্তরের রেজিস্টারে নথিভুক্ত আছে
প্রয়োজনীয় নথিপত্র:
- আধার কার্ড
- ভোটার কার্ড
- ঠিকানার প্রমাণ
- শ্রমিক হিসেবে ভিন রাজ্যে কাজ করার প্রমাণ (যদি থাকে)
- ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ডিটেইলস
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি
আবেদন করার প্রক্রিয়া দেখুন
অনলাইন আবেদন:
- এর জন্য www.shramikbandhu.wb.gov.in অথবা রাজ্য শ্রম দপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে
- সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে নিতে হবে
- নথিপত্র স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে
অফলাইন আবেদন:
- স্থানীয় BLC অফিস, পঞ্চায়েত অফিস, বা লেবার ওয়েলফেয়ার সেন্টারে গিয়ে ফর্ম সংগ্রহ করে জমা করতে পারবেন
- বড় কথা হলো কোনো মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই আবেদন করতে পারবেন
আবেদন করার পর কী হবে?
আবেদনের পর:
- নথিপত্র যাচাই করবে শ্রম দপ্তরের একটি বিশেষ টিমের দ্বারা
- প্রয়োজনে বাড়ি বা ফোনে যোগাযোগ করে যাচাই হতে পারে
- অনুমোদনের পরে আবেদনকারীকে অ্যাপ্রুভাল মেসেজ পাঠানো হতে পারে
- এরপর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ভাতা পাঠানো শুরু হয়ে যাবে
- স্কিল ট্রেনিং ও কর্মশালার তারিখ জানানো হবে
এই প্রকল্পের প্রভাব কতটা
সরকারের হিসেবে, অন্তত ১২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক এই প্রকল্পের আওতায় আসতে পারেন। এর ফলে:
- রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হতে পারে
- স্থানীয় উৎপাদন ও শিল্পে শ্রমিকের চাহিদা মিটতে পারে
- শ্রমিকদের আর ভিন রাজ্যে যেতে হবে না
- পরিবারভিত্তিক কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে
- নতুন ছোট শিল্প তৈরি করতে হবে
পরিশেষে বলা যায়, ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্প কেবলমাত্র একটি সরকারি ঘোষণা নয়, বরং পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছে। তবে এই প্রকল্পের সঠিক রূপায়ণ হলে ভিন রাজ্যে শ্রমিকদের উপর নির্ভরতা অবেকটা কমবে এবং রাজ্যের মানুষ নিজের রাজ্যেই সম্মানের সঙ্গে জীবন যাপনের সুবিধা পাবেন।

NJ Team Writes content for 5 years. I have well experience in writing content in different niches. Please follow us regularly for getting genuine and authentic information.