লক্ষীর ভান্ডার নয়! এই প্রকল্পে মহিলাদের 5,000 টাকা দিচ্ছে রাজ্য সরকার, দেখুন বিস্তারিত – WB Jago Prakalpo Apply

WB Jago Prakalpo Apply:  রাজ্য সরকার মহিলাদের আর্থিক স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করতে আবারও এক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নিয়ে এসেছে। এই প্রকল্পের নাম হলো “জাগো প্রকল্প”, যার আওতায় নির্বাচিত মহিলারা বছরে এককালীন ৫,০০০ টাকা আর্থিক অনুদান পেতে পারেন। এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে অবশ্যই মহিলাদের কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে ।

রাজ্য সরকারের এই প্রকল্প কেবল একটি আর্থিক প্রকল্প নয়, বরং মহিলা স্বনির্ভরতার পথে একটি সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপও বটে। সরকারের তরফে আশা করা হচ্ছে যে এই অনুদান মহিলাদের ক্ষুদ্র উদ্যোগ গঠনে এবং অর্থনৈতিক বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

পোল্ট্রি ফার্ম ব্যবসা, সরকার দিচ্ছে ৫০ হাজার থেকে ৯ লাখ লোন! শুরু করুন এখনই - Poultry Farm Business Idea

প্রকল্পের পেছনের উদ্দেশ্য কী?

এই প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য হল রাজ্যের মহিলাদের এমনভাবে অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করা, যাতে তারা নিজেরাই ক্ষুদ্র ব্যবসা বা স্বনির্ভর কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় বহু মহিলা আছেন, যাঁরা নিজেদের দক্ষতা অনুযায়ী কাজ করতে চাই, কিন্তু মূলধনের অভাবে উদ্দেশ্য বাধাগ্রস্ত হয়। এই প্রকল্প তাঁদের সেই সুযোগ করে দিতে পারে।

তার পাশাপাশি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এও জানানো হয়েছে, জাগো প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে আরও সক্রিয় করে তুলবে। অর্থাৎ, এটি শুধু ব্যক্তি নয়, একটি গোটা গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব এবং সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।

কাদের জন্য এই সুবিধা?

এই প্রকল্প শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের (SHG) সদস্যাদের জন্য আনা হয়েছে। অর্থাৎ, যাঁরা কোনও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত আছেন এবং গোষ্ঠীটি নির্দিষ্ট সময় ধরে সক্রিয় আছে, তাঁদের জন্যই এই সুবিধা প্রদান করা হবে।

এদিকে সরকার জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ১০ লক্ষ মহিলাকে এই সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিশেষত গ্রামীণ এবং আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর মহিলাদের এই প্রকল্পের মাধ্যমে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

“লক্ষীর ভান্ডার” বনাম “জাগো”: কী পার্থক্য?

এদিকে রাজ্যের বহু মানুষ “জাগো” প্রকল্পকে “লক্ষীর ভান্ডার”-এর সঙ্গে তুলনা করছেন। যদিও দুটি প্রকল্পই মহিলাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করার কাজ করে, তবু এর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে।

সাধারণত লক্ষীর ভান্ডারে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করা হয় (১০০০ বা ১২০০ টাকা), যা মূলত গৃহস্থালী খরচের জন্য দেওয়া হয়। অন্যদিকে, “জাগো” প্রকল্পে বছরে একবার এককালীন ৫০০০ টাকা প্রদান করা হয়, যা স্বনির্ভর গোষ্ঠী উন্নয়নের লক্ষ্যে দেওয়া হয়। অর্থাৎ লক্ষীর ভান্ডার যেখানে ব্যক্তি কেন্দ্রিক সহায়তা, সেখানে জাগো প্রকল্প গোষ্ঠীভিত্তিক এবং উদ্যোগ কেন্দ্রীক সহায়তার মধ্যে পড়ে।

কারা যোগ্যতা রাখবেন এই প্রকল্পে?

সরকারের তরফে নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতার শর্ত নির্ধারিত করা হয়েছে, যা পূরণ করতে পারলেই এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন। যোগ্যতাগুলি হল:

  1. অবশ্যই আবেদনকারীকে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
  2. তাঁকে কোনও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য থাকতে হবে।
  3. গোষ্ঠীর বয়স কমপক্ষে ১ বছর থাকতে হবে।
  4. অবশ্যই গোষ্ঠীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চালু থাকা চাই এবং তা কমপক্ষে ৬ মাস পুরনো হতে পারে।
  5. সেই অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে ৫,০০০ টাকা ব্যালেন্স থাকা চাই।
  6. সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীকে পূর্বে কোনো সরকারি ঋণ বা ক্যাশ ক্রেডিট সুবিধা গ্রহণ করা দরকার।

এই সমস্ত শর্ত পূরণ করলে সরকার স্বয়ংক্রিয়ভাবে গোষ্ঠীর অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিবে। আলাদা করে অনলাইনে বা অফলাইনে আবেদন করার দরকার নেই।

কিভাবে টাকা প্রদান করা হবে?

এই প্রকল্পের একটি বিশেষ সুবিধা হল, এতে কোনও রকম সরাসরি আবেদন করা যাবে না। একবার যদি উপরের সব শর্ত পূরণ করে থাকেন, তাহলেই সরকারের তরফে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই গোষ্ঠীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৫০০০ টাকা স্থানান্তর করবে।

এই ব্যবস্থা দুর্নীতি ও হয়রানি কমানোর জন্য নেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছ ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই অর্থ সহায়তা প্রদান করায় প্রকৃত উপকারভোগীর কাছেই অর্থ পৌঁছবে বলে সরকার আশাবাদী রয়েছেন।

এই টাকায় কী কী করা সম্ভব?

যেহেতু এই টাকা সরাসরি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়, তাই এই অর্থ ব্যবহার করা যেতে পারে—

  • গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ বা স্কিল ডেভেলপমেন্টের কাজে
  • ক্ষুদ্র ব্যবসা (হস্তশিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, শাড়ি বয়ন ইত্যাদি) শুরু করতে পারেন
  • প্রাথমিক মূলধন হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ
  • গোষ্ঠীর পরিকাঠামো উন্নয়নে খরচ করা যাবে
  • প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বা কাঁচামাল কিনতে পারেন

তাই বলা যায়, সঠিক পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে, এই অনুদান স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যাদের জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করতে পারে।

মহিলা ক্ষমতায়নে সরকারের এই পদক্ষেপ কতটা কার্যকর?

রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায়, গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার মহিলা উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প অনেছে। লক্ষীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, স্বাস্থ্য সাথীর পর এবার “জাগো” প্রকল্প যোগ হল সেই তালিকায়। এই প্রকল্পগুলি রাজ্যের গ্রামীণ এবং আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা মহিলাদের জীবনে একটি নতুন দিশা দেখাতে চলেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জাগো প্রকল্প যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে তা রাজ্যের নারী উদ্যোক্তা তৈরি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করবে।

সবশেষে বলা যায়,  “জাগো” প্রকল্প নিঃসন্দেহে পশ্চিমবঙ্গের নারী সমাজের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে চলেছে। এটি শুধু আর্থিক অনুদান নয়, বরং নারী উদ্যোক্তা গঠনের এক অনন্য সুযোগ হতে পারে। সরকার চাইছে, মহিলারা যেন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আর্থিকভাবে স্বাধীন হয় এবং রাজ্যের অর্থনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

সতর্কীকরণ: এই প্রতিবেদনের তথ্য সরকারি উন্মুক্ত উৎসের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রকল্পের নিয়মাবলী সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হতে পারে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অথবা স্থানীয় প্রশাসনিক দফতরে যোগাযোগ করতে পারেন।

আরও পড়ুন

রেশন কার্ড নিয়ে নয়া নিয়মাবলি! না মানলে বন্ধ হবে সমস্ত পরিষেবা - WB Ration Card Update 2025

Leave a Comment

error: Content is protected !!