Work From Home: বর্তমান সময়ে বেকারত্ব আমাদের দেশে দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। অনেকেই বহু ডিগ্রি নিয়ে বসে ঘরে বসে আছেন, কিন্তু চাকরি আর মেলে না। এখন সময় বদলেছে। এখন শুধু চাকরির অপেক্ষায় ঘরে বসে না থেকে আপনি চাইলে ঘরে বসেই কয়েক ঘন্টা কাজ করে আয় করতে পারেন মাসে ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত—তাও কোনও পুঁজি ছাড়াই।
আপনার যদি সামান্য যোগ্যতা থেকে থাকে? আপনি বেকার হন বা কাজের ফাকে ইনকাম করতে আগ্রহী তাহলে এই প্রতিবেদন আপনারই জন্য। আসুন ধাপে ধাপে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কী এই নতুন ঘরোয়া কাজ?
বর্তমানে বহু সংস্থা,বিশেষ করে কনটেন্ট নির্মাতা (Content Creators), ইউটিউবার বা পডকাস্টাররা অডিও ফরম্যাটে তাদের চিন্তাভাবনা রেকর্ড করে রেখে থাকেন। কিন্তু পরে সেই অডিওগুলো লিখিত রূপে দরকার হয়ে থাকে বিভিন্ন প্রয়োজনে—যেমন ব্লগ, সাবটাইটেল, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাপশন দিতে, স্ক্রিপ্ট তৈরি করতে ইত্যাদির জন্য।
এই ধরনের অডিওকে লিখিত টেক্সটে রূপান্তরের কাজকে বলা হয় ভয়েস নোট ট্রান্সক্রিপশন (Voice Note Transcription)। এবং এই কাজটি এখন খুব চাহিদাসম্পন্ন হয়ে দাড়িয়েছে।
কীভাবে হয় এই কাজ?
এটি খুবই সহজ একটি কাজ। আপনাকে শুধু একটি ভয়েস রেকর্ড শোনার পর সেটিকে টাইপ করে লিখে নিতে হবে। যেমন ধরুন:
- কেউ হোয়াটসঅ্যাপ-এ বা অন্য অ্যাপে ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছে এইভাবে
- আপনাকে সেই অডিও শুনে সেটা টাইপ করে পাঠাতে হবে নির্ধারিত ফরম্যাটে যা চাওয়া হবে
এক্ষেত্রে আপনার ইংরেজি বা বাংলা ভাষা বোঝার ক্ষমতা যদি ভালো হয় এবং আপনি যদি টাইপিংয়ে মোটামুটি দক্ষ হয়ে থাকেম, তবে এই কাজটি আপনার জন্য একদম পারফেক্ট হতে পারে।
কী লাগবে শুরু করতে?
এই কাজ শুরু করার জন্য প্রয়োজন:
- একটি স্মার্টফোন বা কম্পিউটার দরকার হতে পারে
- ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে
- ইয়ারফোন (ভালোভাবে অডিও শুনতে) থাকলে ভালো
- টাইপিং করার স্কিল (বাংলা/ইংরেজি বা অন্যান্য ভাষা অনুযায়ী) থাকা জরুরি
এক্ষেত্রে বিশেষ কোনও সফটওয়্যার লাগবে না, বিনামূল্যে গুগল ডকস, MS Word বা নোটপ্যাডেই কাজ চালিয়ে নেওয়া যায় এই কাজ।
কত সময় দিতে হবে প্রতিদিন?
শুরুতে আপনি যদি প্রতিদিন মাত্র ২–৩ ঘণ্টা সময় দিয়ে লাজ করেন, তাহলেও আপনি মাসে ১০,০০০–১৫,০০০ টাকা আয় করতে পারেন সহজেই।
আসতে আসতে আপনার স্পিড ও কোয়ালিটি বাড়লে, কাজের পরিমাণ বাড়বে এবং ক্লায়েন্টের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। তখন আপনার মাসিক আয় ২০,০০০ বা তার বেশি হতে বাধ্য হবে।
কোথায় পাওয়া যাবে এই কাজ?
এই কাজগুলো বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া সম্ভব, আপনি চাইলে নিচের প্ল্যাটফর্মগুলোতে নিজের প্রোফাইল তৈরি করে কাজ খুঁজতে পারেন:
- Upwork
- Fiverr
- Freelancer.com
- PeoplePerHour
- WorkIndia
- Internshala
- Facebook Freelancing Group (বাংলা ও ইংরেজি)
- ইত্যাদি
এছাড়া, Telegram Channels-এও প্রচুর কাজ দেওয়া হয় ফ্রিল্যান্সিং সংক্রান্ত, যেগুলি নির্ভরযোগ্য হলে সেখান থেকেও শুরু করতে পারেন তবে সেখানে অনেক প্রতারণাও হয়ে থাকে তাই জেনে-বুঝে তারপর পদক্ষেপ নিবেন ।
কত টাকা আয় হতে পারে?
- প্রতিদিন যদি মাত্র ২ ঘণ্টা কাজ করেন= ৪০০–৬০০ টাকা আয় করা সম্ভব
- মাসে ২০–২৫ দিন কাজ করলে = ₹১২,০০০–₹১৫,০০০ আয় সম্ভব
- স্পিড ও দক্ষতা বাড়লে আয় = ₹১৮,০০০–₹২৫,০০০ বা তার বেশিও হতে পারে
এই সমস্ত ইনকাম একেবারেই ঘরে বসে, নিজের ইচ্ছেমতো সময় বেছে নিয়ে করা সম্ভব।
কারা করতে পারেন এই কাজ?
এই কাজটি উপযুক্ত তাদের জন্য যারা:
- যারা কলেজে পড়াশোনা করছেন এবং পার্ট টাইম আয় করতে ইচ্ছুক
- যাঁরা গৃহবধূ এবং ঘরের কাজ সামলে ইনকাম করতে আগ্রহী
- অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ বা প্রবীণরাও কাজটি করতে পারেন এখানে
- বেকার যুবক/যুবতীদের জন্য এটা এক আদর্শ শুরু হতে পারে
- যারা ফুল টাইম চাকরি খুঁজে পাননি, তাদের জন্য এক বিকল্প আয় মাধ্যম হতে পারে
কীভাবে দক্ষতা বাড়াবেন?
আপনি যদি এই কাজটিতে একবার অভ্যস্ত হয়ে যান, তাহলে কয়েকটি বিষয়ের উপর একটু নজর দিতে পারেন:
- অডিও ভালোভাবে শুনে লিখে নেওয়ার অভ্যাস করতে হবে
- বানান ও ব্যাকরণ ঠিক রাখার চেষ্টা করতে হবে
- টাইপিং গতি বাড়াতে অনুশীলন করতে হবে
- Google Docs বা Grammarly ব্যবহার করে প্র্যাকটিস করতে হবে
- ছোট প্রজেক্ট দিয়ে শুরু করুন, ধীরে ধীরে বড় ক্লায়েন্ট নিতে হবে
বাড়তি কিছু টিপস
- যারা বাংলায় কনটেন্ট তৈরি করে থাকেন , তাঁদের কাছেও কাজের প্রচুর সুযোগ থাকনে
- আপনি চাইলে ইউটিউব ভিডিওর সাবটাইটেল রূপান্তরের কাজও করতে পারেন এর মাধ্যমে
- কিছু অডিও ভার্সনকে আর্টিকেল বা ব্লগে রূপান্তরের কাজেও নিয়োগ হয়ে থাকো
- যদি আপনার ভয়েস ক্লিয়ার হয়, তাহলে স্পিচ-টু-টেক্সট অ্যাপের সহায়তাও নিতে পারেন ভালো দক্ষতার জন্য
পরিশেষে বলাই যায়, বেকারত্বের এই সময়ে ভয়েস নোট ট্রান্সক্রিপশন কাজ হতে পারে আপনার জন্য জীবনের এক নয়া মোড়, । ঘরে বসে শুধুমাত্র ২–৩ ঘণ্টা সময় দিয়ে মাসে ১৫,০০০–২০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব অনায়াসে।
বড় কথা হলো এই কাজে বিশেষ কোনও বিনিয়োগ লাগে না, ঝুঁকিও শূন্য, বরং আপনার দক্ষতার উপর ভিত্তি করেই আপনি এগোতে পারেন নতুন দিগন্তে। ভবিষ্যতে এটিকে নিজের ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার বা পার্ট টাইম ব্যবসার রূপও দিতে পারেন সহজেই।
